সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়ার পরও কমছে না পথশিশুর সংখ্যা। প্রতিনিয়ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যোগ দিচ্ছে শিশুরা। এতে পথশিশু ও ঝুঁকিতে থাকা শিশুর সংখ্যা আরো বাড়ছে। এ অবস্থায় তাদের সুরক্ষায় ‘পথশিশু ও ঝুঁকিতে থাকা শিশুর পুনর্বাসন’ শীর্ষক শতকোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে সরকার।
নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি। প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ আগামী জুলাই থেকে শুরু হবে। শেষ হবে ২০২৯ সালের জুনে। নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের দেওয়া প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে প্রতিবেদনটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার পাশাপাশি শিশু সুরক্ষার বিষয়টি বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কমিটির পক্ষ থেকে সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগেও পথশিশুদের সমাজের মূলধারায় আনতে কাজ করা যায়, সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাগুফতা ইয়াসমিন কালের কণ্ঠকে বলেন, যে শিশুরা পথে থাকে, তাদের নিরাপত্তাঝুঁকি বেশি।
তারা খুবই অনিরাপদ অবস্থার মধ্যে থাকে। নানা সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং অনেক রকমের নির্যাতনেরও শিকার হয়। ওই পথশিশুদের স্বাভাবিক জীবনযাপন নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে ‘পথশিশু ও ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের পুনর্বাসন’ শীর্ষক প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। কমিটির পক্ষ থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মনিটরিং জোরদার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে শিশু সুরক্ষায় ব্যক্তি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা বাড়াতে বলা হয়েছে। সংসদীয় কমিটিতে উত্থাপিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে পথশিশু ও ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের উন্নয়নের মাধ্যমে সমাজের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্তকরণ এবং পথশিশু ও ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে ওই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে সারা দেশে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এরই মধ্যে এসংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পথে বসবাসকারী ও অবস্থানকারী শিশুদের সংখ্যা কমিয়ে আনা; পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন শিশুদের পরিবারে এবং সমাজে পুনরেকত্রীকরণ বা হস্তান্তর করা; পথশিশু ও ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের আশ্রয় দেওয়াসহ আনুষ্ঠানিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার আওতায় আনা; ঝুঁকিতে থাকা পথশিশুর জন্য বিশেষ কার্যক্রম; কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পথশিশু ও ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করা এবং সমন্বিত নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নেটওয়ার্কিং প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নীতি বাস্তবায়ন করা।
প্রকল্পের প্রস্তাবিত কার্যক্রম সম্পর্কে বলা হয়েছে, পথশিশুদের পুনর্বাসনের জন্য শেল্টারহোম স্থাপন ও পরিচালনা; ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ট্রানজিট হোম স্থাপন ও পরিচালনা; পরিবার বিচ্ছিন্ন শিশুদের পুনরেকত্রীকরণ, পালক পরিবারে প্রতিপালনের মাধ্যমে পথশিশু ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশুর পুনর্বাসন, সামাজিক ও পরিবার বিচ্ছিন্ন শিশুদের পুনরেকত্রীকরণ কার্যক্রম; পথশিশু ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশুর জন্য কন্ডিশনাল ক্যাশ ট্রান্সফার ও উপবৃত্তি কার্যক্রম; শিশুদের স্বাবলম্বী করতে আর্থিক সহায়তা প্রদান; উন্মুক্ত পথশিশু স্কুল স্থাপন ও পরিচালনা; রেল, বাস ও লঞ্চঘাটে কাউন্সেলিং বুথ স্থাপন ও পরিচালনা; পথশিশু ও ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের উৎস ও গন্তব্যস্থান নির্ধারণ ইত্যাদি।
এ বিষয়ে স্ট্রিট চিলড্রেন অ্যাক্টিভিস্টস নেটওয়ার্ক (স্ক্যান) বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল বলেন, সরকার শিশুশ্রম বন্ধে গত ১২ বছরে ৩৫২ কোটি টাকা ব্যয় করলেও শিশুশ্রম বন্ধ হয়নি, বরং বেড়েছে। এক দশকে দেশে প্রায় এক লাখ শিশুশ্রমিক বেড়েছে। একইভাবে পথশিশুও বাড়ছে। তাই পথশিশুদের পাশাপাশি অনগ্রসর শিশুদের জন্য পুনর্বাসন, শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে। আর প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে ‘শিশু অধিদপ্তর’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।