যুক্তরাজ্য, শ্রীলঙ্কা, নাইজেরিয়াসহ বিশ্বের বহু দেশে ভিসাসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ভিএফএস গ্লোবালের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি এবং অতিরিক্ত সার্ভিস চার্জ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। খোদ ভারতেই প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের বিরুদ্ধে রয়েছে জালিয়াতির গুরুতর অভিযোগ। প্রতিষ্ঠানটির জালিয়াতির এসব খবর ওই সব দেশের গণমাধ্যমে উঠে এসেছে বহুবার।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের মে মাসে নাইজেরিয়ার প্রখ্যাত অনুসন্ধানী সাংবাদিক থিওফিলাস আব্বাহ দক্ষিণ আফ্রিকার ভিসার জন্য ভিএফএসের মাধ্যমে আবেদন করেন।
ওই সাংবাদিকের ভিসা দেয় দক্ষিণ আফ্রিকার দূতাবাস। কিন্তু ভিএফএসের ভাউচার চেক করতে গিয়ে তিনি দেখেন ভিসার দামের চেয়েও বেশি সার্ভিস চার্জ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ওই সময় দক্ষিণ আফ্রিকার ভিসার ফি ধরা হয়েছিল স্থানীয় মুদ্রায় আট হাজার ৬০০ নাইরা। এর বিপরীতে সেবা দেওয়ার জন্য ভিএফএস গ্লোবাল সার্ভিস চার্জ নিয়েছিল ২৫ হাজার ২৭০ নাইরা।
অতিরিক্ত সার্ভিস চার্জ নেওয়ার বিষয়টিকে প্রতারণা বিবেচনা করেছিলেন আব্বাহ। পরবর্তী সময়ে একই বছরের ১৪ মে নাইজেরিয়ার সংবাদপত্র প্রিমিয়াম টাইমস ভিএফএসের নানা অনিয়ম নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এদিকে ছায়া অফিসের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের হোম অফিসের সঙ্গে ভিসা প্রক্রিয়াকরণের কাজ নবায়ন করে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ভিএফএসের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া নিম্নমানের সেবা দিয়ে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
ভিএফএসের কর্মীদের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য দেওয়া, সরকারি কর্মীদের মতো আচরণ করা এবং প্রিমিয়াম সার্ভিস নিতে বাধ্য করার মতো অভিযোগ উঠেছিল। এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের দ্য ডিপ্লোম্যাট পত্রিকা ২০২০ সালের ১৩ জুলাই একটি সংবাদ প্রচার করে।
যুক্তরাজ্যের গার্ডেন কোর্ট চেম্বার্সের ইমিগ্রেশন ব্যারিস্টার এবং ব্রিটিশ অভিবাসনব্যবস্থা নিয়ে লেখা বই ‘ওয়েলকাম টু ব্রিটেন’-এর লেখক কলিন ইয়ো দ্য ডিপ্লোম্যাট পত্রিকাকে বলেন, ‘যাঁরা যুক্তরাজ্যে ভিসার জন্য আবেদন করেন, তাঁরা তাঁদের মধ্য দিয়ে যান এবং তাঁরা যেসব দেশকে সেবা দেন, সেখানে তাঁদের একচেটিয়া অবস্থান রয়েছে। তাঁদের সেবার মান নিয়েও রয়েছে যথেষ্ট অভিযোগ।’
এ ছাড়া শ্রীলঙ্কার ভিসা প্রদানকে কেন্দ্র করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে ভিএফএস গ্লোবাল। পরবর্তী সময়ে দায়সারা বিবৃতি দিয়ে দায় এড়ায় প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বাংলাদেশের থাইল্যাল্ডে ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন কর্মী অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ রয়েছে। শেষ পর্যন্ত ওই সব কর্মীকে বহিষ্কার করে ভিএফএস গ্লোবাল।
এদিকে ভিএফএস গ্লোবালের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে খোদ ভারতেই। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অফিস সুইজারল্যান্ড ও দুবাই বললেও মূলত ভারতীয় মালিকানা বেশি ভিএফএস গ্লোবালের। গত বছরের জুলাই মাসে কানাডার ভিসা প্রক্রিয়াকরণ করতে গিয়ে গুরুতর জালিয়াতির আশ্রয় নেন ভিএফএসের কর্মীরা। নথিপত্র জাল করে এবং কানাডার কর্তৃপক্ষকে না জানিয়েই ২৮ জন ভারতীয় নাগরিকের আঙুলের ছাপ (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) নিয়ে নেওয়া হয়।
পরে জালিয়াতির বিষয়টি কানাডার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ধরে ফেলে এবং ভিএফএসকে ই-মেইলে অবহিত করে। এরপর প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক বোমেশ ঠাকুর ভারতের ক্রাইম ব্রাঞ্চে অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের পুলিশ ওই জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অফিযোগে ভিএফএসের দুই কর্মী ও একজন সাবেক কর্মীকে গ্রেপ্তার করে।
ভিএফএস গ্লোবালের সাবেক কর্মচারী মেহুল ভারওয়াদ এবং দুই কর্মচারী সোহিল দিওয়ান ও মেলভিন ক্রিস্টি, কয়েকজন ট্রাভেল এজেন্টসহ সিস্টেমে একজন আবেদনকারীকে নিবন্ধন করার জন্য সঠিক পদ্ধতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জালিয়াতি করেছেন। জালিয়াতি করে ২৮ জন আবেদনকারীর বায়োমেট্রিক্স নথিভুক্ত করেন এবং তাঁদের জাল ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার প্রদান করেছেন। এই জালিয়াতির জন্য ভিএফএসের কর্মীরা প্রত্যেক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার থেকে সাত হাজার রুপি নেন বলে ভারতের পুলিশ জানায়।