নির্বিঘ্নে বাড়ি যেতে আগামী ঈদুল ফিতরের ছুটি একদিন বাড়ানোর সুপারিশ করেছে আইশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
আজ রোববার (৩১ মার্চ) সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি আগামী ৯ এপ্রিল ছুটি রাখার সুপারিশ করেছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন কমিটির সভাপতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
কমিটির সুপারিশ আগামীকাল সোমবার (১ এপ্রিল) মন্ত্রিসভা বৈঠকেও উপস্থাপন করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সরকারি ছুটির তালিকা অনুযায়ী, আসন্ন রমজানের ঈদে সরকারি কর্মচারীদের ছুটি মিলতে পারে টানা ১০ দিন। এর মধ্যে শবে কদর, পহেলা বৈশাখ ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে ঈদে বড় বন্ধ পেতে পারেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
অপর দিকে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১০ বা ১১ এপ্রিল পবিত্র ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হতে পারে। সাধারণত আমাদের দেশে ২৯ রমজান থেকে শুরু হয় তিন বা চারদিনের ঈদের ছুটি। সে অনুযায়ী ৯ এপ্রিল (মঙ্গলবার) থেকে ঈদের ছুটি শুরু হতে যাচ্ছে। এরপর ১২ ও ১৩ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটি (শুক্র ও শনিবার)। আর ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের ছুটি শেষে ফের অফিস শুরু হবে ১৫ এপ্রিল (সোমবার)। সেই হিসাবে ছুটি মিলছে ছয়দিনের।
এদিকে ঈদের ছুটির আগে ৫ ও ৬ এপ্রিল শুক্র ও শনিবার। ৭ এপ্রিল (সোমবার) শবে কদরের বন্ধ থাকছে। মাঝে ৮ এপ্রিল এক দিন কর্মদিবস থাকছে সরকারি চাকরিজীবীদের। তাই এই দিন ছুটি নিলেই তারা একসঙ্গে কাটাতে পারবেন ১০ দিন।
এবার রমজান মাস ৩০ দিনের হতে পারে বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছে আরব আমিরাত। ফলে দেশটিতে ঈদুল ফিতর পালিত হতে যাচ্ছে ১০ এপ্রিল।
এর আগে গত বুধবার (২৭ মার্চ) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে ঈদুল ফিতরের ছুটি দুইদিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
ওই দিন সংগঠনটির পক্ষ থেকে মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এবারের ঈদে ঢাকা থেকে ১ কোটি, গাজীপুর থেকে ৪০ লাখ, নারায়ণগঞ্জ থেকে ১২ লাখসহ ঢাকা ও আশপাশের জেলা থেকে ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করবে। এসব যাত্রীর ঈদের আগের চারদিনে বাস-মিনিবাসে ৩০ লাখ, ট্রেনে ৪ লাখ, প্রাইভেটকার, জিপ ও মাইক্রোবাসে ৩৫ লাখ, মোটরসাইকেলে ১২ লাখ, লঞ্চে ৬০ লাখ, উড়োজাহাজে প্রায় ১ লাখ যাত্রীর যাতায়াত হতে পারে।
গণপরিবহন সংকট ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যর কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে এবং খোলা ট্রাক ও পণ্যবাহী পরিবহনে ১৮ লাখ যাত্রীর যাতায়াত হতে পারে। এছাড়াও আন্তঃজেলায় যাতায়াত করবে প্রায় ৪ থেকে ৫ কোটি যাত্রী। এতে আগামী ৫ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ঈদবাজার, গ্রামের বাড়ি যাতায়াতসহ নানা কারণে দেশের বিভিন্ন শ্রেণির পরিবহনে বাড়তি প্রায় ৬০ কোটি ট্রিপ হতে পারে।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, গণপরিবহনের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে এবারের ঈদযাত্রায় নারকীয় পরিস্থিতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেননা এবার রোজা ৩০টি সম্পন্ন হলে ১১ এপ্রিল ঈদ হতে পারে। ঈদের আগে ১০ এপ্রিল মাত্র একদিন সরকারি ছুটি রয়েছে। ঈদের পরে ১০ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ৫ দিনের লম্বা ছুটি রয়েছে। ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ হওয়ায় এবারের ঈদযাত্রায় মুসলমানদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও পহেলা বৈশাখ উদযাপনে লম্বা ছুটির সুবাধে গ্রামের বাড়ি যাবে। তাই যাত্রী সংখ্যা বাড়বে। আগামী ৯ ও ১০ এপ্রিল প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ লাখ হারে মানুষ রাজধানী ছাড়বে।
‘অথচ আমাদের গণপরিবহনগুলোতে ২২ থেকে ২৫ লাখের মতো মানুষ পাড়ি দেওয়ার সক্ষমতা আছে। এমন পরিস্থিতিতে ঈদের আগে ছুটি না বাড়ালে দেশের সব পথে যাতায়াত পরিস্থিতি কোমায় চলে যেতে পারে। তাই ৮ এবং ৯ এপ্রিল দুই দিন ঈদের ছুটি বাড়ানো হলে ৫ এপ্রিল থেকে সবাই সাচ্ছন্দে, ধাপে ধাপে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পাবে। গণপরিবহন সংকট ও যাত্রী ভোগান্তি থেকেও মুক্তি মিলবে। এই কারণে ৮ ও ৯ এপ্রিল দুদিন ঈদের ছুটি বাড়ানোর দাবি করছি।