বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের পর রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু রেস্তোরাঁ বন্ধ দেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে কয়েকজনকে আটকও করা হয়েছে। তবে অভিযানের নামে হয়রানি বন্ধের দাবি রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির। প্রয়োজনে সব রেস্তোরাঁর চাবি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠিয়ে দিয়ে অন্য কাজে চলে যাওয়ার কথা বলছে সংগঠনটি।
আজ মঙ্গলবার (৫ মার্চ) রাজধানীর আল-রাজী টাওয়ারে রেস্তোরাঁ ব্যবসার সংকট উত্তরণ ও রমজান মাসে ব্যবসা পরিচালনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি।
রাজধানীতে গত কয়েকদিনের অভিযানে প্রায় ৪০টির মতো রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের অপেক্ষায় আছি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়ে দপ্তরে চিঠি দিয়েছি। বিশ্বাস করি, উনি দেখলে আমাদের ডাকবেন। আর যদি সাক্ষাৎ না পাই, তাহলে সমস্ত রেস্টুরেন্টের চাবি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠিয়ে দিয়ে অন্য কাজে চলে যাব।
তিনি বলেন, আমাদের ওপর যে অবিচার করা হচ্ছে, সেটি কী হাইকোর্ট দেখছেন না? এই দেশে তো বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে। আজ সকালের দিকে বেইলি রোডের নবাবী ভোজ রেস্তোরাঁয় ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করে সেটি বন্ধ করে দেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। তবে, নবাবী ভোজের ১২টি লাইসেন্স আছে উল্লেখ করে মালিক সমিতির সভাপতি বলেন, তাহলে কেন সেটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে?
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, কিছু লোক রেস্তোরাঁ নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। তারা অন্যান্য ব্যবসার মতো রেস্তোরাঁ ব্যবসাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে এগুলো করছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, তিতাস গ্যাসের পর্যাপ্ততা নেই। আবার লাইন সংযোগ থাকলেও লাইনে গ্যাস নেই। এখন বিকল্প ব্যবস্থা গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার বা লাকড়ি ব্যবহার। লাকড়ি ব্যবহার করলে কিচেনসহ পুরো রেস্টুরেন্ট কালো হয়ে যায়, পরিবেশ ঠিক থাকে না। পুরো বিষয়টি নিয়ে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাচ্ছি এবং ভবিষ্যতের জন্য নির্দিষ্ট একটি গাইডলাইন তৈরি করতে হবে যাতে ব্যাঙের ছাতার মতো রেস্তোরাঁ গজিয়ে উঠতে না পারে।
অপরদিকে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করে আগামী বৃহস্পতিবার প্রতিটি রেস্তোরাঁয় কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি।
উল্লেখ্য, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে একটি বহুতল ভবনে ভয়াবহ আগুন লাগে। এ ঘটনায় ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া, গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ২২ জন।
বেইলি রোডের যে ভবনে আগুন লেগেছে, সেটি সাততলা। ভবনের দ্বিতীয় তলায় ‘কাচ্চি ভাই’ নামের খাবারের দোকান রয়েছে। তৃতীয় তলায় একটি পোশাকের দোকান ছাড়া ওপরের তলাগুলোতেও রয়েছে খাবারের দোকান। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে খাবারের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় হয়। অনেকেই পরিবার নিয়ে সেখানে খেতে যান।
তিনতলায় ছিল কাপড়ের দোকান। বাকি সব ছিল রেস্টুরেন্ট। রেস্টুরেন্টগুলোতে ছিল গ্যাস সিলিন্ডার। যে কারণে আগুনের তীব্রতা ছড়িয়েছে ভয়াবহভাবে। এছাড়া, ওই ভবনটিতে অগ্নিনির্বাপণের যথাযথ কোনো ব্যবস্থা রাখা ছিল না।
পরে বেইলি রোডের এ আগুনের ঘটনায় নড়েচড়ে বসে সিটি কর্পোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। রাজধানীর যেসব ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা যথাযথ নয়, সেসব ভবনে গড়ে তোলা রেস্টুরেন্টগুলোতে অভিযান শুরু হয়। রেস্টুরেন্টগুলোতে অগ্নিনির্বাপণের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকলে সেগুলোকে জরিমানা, এমনকি সিলগালাও করে দেওয়া হচ্ছে। গত কয়েকদিনে রাজধানীতে ৪০টি রেস্টুরেন্ট সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।