প্রথম মিশন ব্যর্থ হওয়ায় পাল্টানো হয় পরিকল্পনা

জামিল শেখকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল তিন মাস আগে। মুখে বালিশ চেপে হত্যার পর লাশ টয়লেটে রেখে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, এমন নাটক সাজানোর পরিকল্পনা করেছিল স্ত্রী আরজিনা ও তার পরকীয়া প্রেমিক শাহীন মল্লিক। জামিল যথেষ্ট স্বাস্থ্যবান। তাকে দু’জন মিলে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করা সম্ভব নয় ভেবে বন্ধু কোয়াজ আলীকে ভাড়া করেছিল শাহীন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার রাতে তরকারির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিয়েছিল স্ত্রী আরজিনা। জামিল ঘুমে আচ্ছন্ন হলে শাহীন তার বুকে চেপে বসে। আরজিনা হাত জাপটে ধরে। আর মুখে বালিশ চেপে ধরে কোয়াজ। তার পরও জেগে ওঠেন জামিল। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে উঠে বসেন। এ সময় কোয়াজ পালিয়ে যায়। ঘুমের ওষুধ খাওয়ায় পুরো চেতনে ছিলেন না জামিল। ব্যর্থ হয় প্রথম মিশন। জামিলকে হত্যার পরিকল্পনায় অটল থাকে শাহীন ও আরজিনা। দ্বিতীয় চেষ্টায় কাঠ দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয় তাকে। রক্তাক্ত হওয়ায় ‘হৃদরোগে আক্রান্ত’ হয়ে মারা গেছেন, এই ‘গল্প’ পরিবর্তন করে ‘ডাকাত নাটক’ সাজানো হয়। আরজিনার জবানবন্দি ও মামলার তদন্ত সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এদিকে হত্যা মামলায় কোয়াজ আলী ও শাহীনের স্ত্রী মাসুমাকে গতকাল রোববার চার দিনের রিমান্ডে নিয়েছে বাড্ডা থানা পুলিশ। গত বুধবার রাতে রাজধানীর উত্তর বাড্ডার ময়নারবাগে ভাড়া বাড়ির তৃতীয় তলায় গাড়িচালক জামিল শেখ ও তার মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান জিদনীকে হত্যা করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই জোড়া হত্যাকাণ্ডে জামিলের স্ত্রী আরজিনা ও রঙমিস্ত্রি শাহীনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় মামলা করা হয়। এ মামলায় প্রথমে আরজিনা, শাহীন ও শাহীনের স্ত্রী মাসুমাকে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার গ্রেফতার করা হয় কোয়াজকে। স্বামী ও মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করে গত শনিবার আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে আরজিনা। একই দিন শাহীনকে চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। তাকে বাড্ডা থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার এসআই সাখওয়াত হোসেন জানান, কোয়াজ ও মাসুমার সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে গতকাল আদালতে হাজির করা হয়। আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার তদন্ত সূত্র জানায়, তিন মাস আগে জামিলকে হত্যার পরিকল্পনা করে শাহীন ও আরজিনা। ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তাকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। আরজিনা ও শাহীন তাকে হত্যা করতে পারবে না ভেবে কোয়াজকে ভাড়া করা হয়। কোয়াজ আলী বাড্ডার গুদারাঘাট এলাকায় বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স নামে একটি স্যানিটারি দোকানের কর্মচারী। তার গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জে। থাকে উত্তর বাড্ডার ময়নারবাগে। ক’বছর ধরে শাহীনের সঙ্গে কোয়াজের বন্ধুত্বের সম্পর্ক। জামিলকে হত্যার বিনিময়ে কোয়াজকে ব্যবসা করার টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখায় শাহীন। এ প্রলোভনে সে রাজি হয়।

গত বুধবার রাতে করলার তরকারির সঙ্গে জামিলকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ায় আরজিনা। রাত ১১টার পরপরই মোবাইল ফোনে কোয়াজকে ডেকে পাঠায় শাহীন। সে আসার পর আরজিনা ঘরের দরজা খুলে দিলে শাহীন ও কোয়াজ প্রবেশ করে। তিনজন মিলে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করতে ব্যর্থ হলে আরজিনার সহায়তায় শাহীন কাঠ দিয়ে মাথায় আঘাত করে জামিলকে হত্যা করে। দেখে ফেলায় মেয়ে নুসরাতকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। পরে ‘ডাকাত নাটক’ সাজায় আরজিনা। ডাকাতরা ঘরে প্রবেশ করে স্বামী ও মেয়েকে হত্যা করেছে বলে জানায়। তবে পুলিশের জেরার মুখে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসে।

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, ০৬  নভেম্বর  ২০১৭

লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস