প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন চাইলে নির্বাচন পিছিয়ে দিতে পারে এটি ভুল ধারণা, নির্বাচন পেছানোর এখতিয়ার কমিশনের নেই।’
আজ সোমবার (১ জানুয়ারি) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের দ্বিতীয় পর্বের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
দেশে নিরবচ্ছিভাবে নির্বাচন করার মতো পরিবেশ আসেনি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন এককভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে না। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র নির্বাচনে সহযোগিতা করতে বাধ্য। কোনো নির্বাচনই পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ হয়নি। আমাদের এখনও নিরবচ্ছিভাবে নির্বাচন করার মতো পরিবেশ আসেনি। তবে অস্বাভাবিক সহিংসতা কাম্য নয়।
দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা এখনও স্থিতিশীল হয়ে ওঠেনি মন্তব্য করে হাবিবুল আউয়াল বলেন, যেকোনো কারণেই হোক নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে একটা অনাস্থা তৈরি হয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে সহিংসতা না হলেও পরবর্তীতে এই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জনগণের অভিমত ইতিবাচক ছিল না। তাই এবার ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটিকে দেখাতে হবে নির্বাচনটা অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। নির্বাচনকে দৃশ্যমানভাবে স্বচ্ছ করতে হবে। নির্বাচনকে জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করতে হবে।
সিইসি বলেন, ৪২ থেকে ৪৩ হাজার কেন্দ্রে একই দিনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এখানে কাজের ক্ষেত্র অনেক বিস্তৃত। তাই অনেককে এখানে দায়িত্ব পালন করতে হয়। আমরা নির্বাচন কমিশনে দায়িত্ব পালন করছি। সর্বোচ্চ দায়িত্ব এ কমিশনকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন কখনো একক সিদ্ধান্তে একটি নির্বাচন আয়োজন করতে পারে না।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন চাইলে ভোট পিছিয়ে দিতে পারে এটি ভুল ধারণা। নির্বাচন পেছানোর এখতিয়ার কমিশনের নেই।
সিইসি আরও বলেন, দীর্ঘস্থায়ী গণতন্ত্র যেটাকে বলা হয়, যেটা আমরা ভারতে লক্ষ্য করেছি, বিলেতে লক্ষ্য করছি, আমেরিকাতে লক্ষ্য করছি। কিন্তু আমাদের দেশে নিরবচ্ছিন্নভাবে গণতন্ত্র গড়ে উঠেনি।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেকোনো মূল্যে ভোট কেন্দ্রের পরিস্থিতি সুন্দর রাখতে হবে। সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশ্যে হাবিবুল আউয়াল বলেন, রাজনীতি ও নির্বাচনী সংস্কৃতি পরিবর্তন হয়নি। এখনও নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়। আপনাদের সহযোগিতায় নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে আশা করি।
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছে বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলো। বিএনপির দাবি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তা সুষ্ঠু হবে না। অন্যদিকে সংবিধানের বাইরে ছাড়া নির্বাচন হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দুই দলের এমন অবস্থানের মধ্যেই গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ইসির ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন যেন অবাধ ও সুষ্ঠু হয় সেজন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইসি।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. জাহাংগীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন- নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার।