২০২১ সালে বাংলাদেশ বিশ্ববাজার থেকে প্রায় সোয়া কোটি টন খাদ্যপণ্য আমদানি করেছে। এতে বিশ্বের খাদ্য আমদানিকারক দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ।
বিশ্ব খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক বার্ষিক পরিসংখ্যান পুস্তিকা-২০২৩–এ এসব তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। পুস্তিকাটি সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে।
এফএওর হিসাবে, ২০২১ সালে বাংলাদেশ ৯ কোটি ৩৩ লাখ টনের মতো কৃষিপণ্য উৎপাদন করেছে। একই বছর বিশ্ববাজার থেকে প্রায় সোয়া কোটি টন খাদ্যপণ্য আমদানি করেছে। এখনো খাদ্য আমদানি ব্যয়ের সবচেয়ে বড় অংশ দখল করে আছে গম, ভোজ্যতেল ও গুঁড়া দুধ।
বাংলাদেশে আমদানিনির্ভর খাদ্যপণ্যগুলোর দাম বেশি উল্লেখ করে এফএও বলছে, ভোজ্যতেল, মাংস ও দুধের মতো পুষ্টিকর খাদ্যগুলোর মাথাপিছু ভোগ সবচেয়ে কম। অবশ্য দেশে উৎপাদিত খাদ্যপণ্য যেমন চাল, সবজি, মাছ ও ফলের মাথাপিছু ভোগের দিক থেকে দেশের মানুষ ভালো অবস্থানে আছে।
এফএওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান নিচের দিকে। আর বিশ্বের খাদ্য আমদানিকারক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। আমদানির দিক থেকে শীর্ষ স্থানে রয়েছে চীন। দ্বিতীয় স্থানে ফিলিপাইন। আর খাদ্য রপ্তানির দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ দেশ হচ্ছে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, চীন ও ফ্রান্স। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারে শেষের দিকে রয়েছে।
তবে বিশ্বের প্রধান ছয়টি খাদ্যপণ্যের মধ্যে বাংলাদেশ শুধু চাল উৎপাদনে তৃতীয় অবস্থানে আছে। বাকি প্রধান কৃষিপণ্যগুলোর মধ্যে গম, ভুট্টা, চিনি, ভোজ্যতেল ও আলু উৎপাদনে বাংলাদেশের নাম শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে নেই। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ প্রথম চারটি পণ্য আমদানি করত। আলু আমদানির প্রয়োজন হতো না। বরং বাংলাদেশ আলু রপ্তানি করত। চলতি বছর আলুর দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের নাম আলু আমদানিকারক দেশের তালিকায় ঢুকেছে।
এফএওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিশ্ববাজার থেকে খাদ্য আমদানির ওপরে নির্ভরশীলতা বাড়ছে। ২০১০ সালে যেখানে বাংলাদেশের মোট খাদ্য চাহিদার ৯ দশমিক ৩ শতাংশ আমদানি করেছে, ২০২২ সালে বেড়ে ১১ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে চাল, গম ও ভোজ্যতেলের আমদানি বাড়ছে। তবে ডলার–সংকটের কারণে গত বছরের তুলনায় এ বছর চাল আমদানি হয়নি বললেই চলে। গমের আমদানিও স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে।
প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশের মাথাপিছু খাদ্যশক্তি গ্রহণের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্বে গড়ে প্রত্যেক মানুষ দিনে ২ হাজার ৯৭৮ ক্যালরি বা খাদ্যশক্তি গ্রহণ করে। এশিয়ায় তা গড়ে ২ হাজার ৯৩১ ক্যালরি। বাংলাদেশের মাথাপিছু খাদ্যশক্তি গ্রহণের পরিমাণ ২ হাজার ৬১৪ ক্যালরি। বাংলাদেশের মোট খাদ্যশক্তির মধ্যে ১ হাজার ২৮৮ ক্যালরি আসে চাল ও গম বা দানাদার খাদ্য থেকে। এরপর রয়েছে যথাক্রমে ভোজ্যতেল ২০৩, চিনি ৮৩, ফল ৯৪ ও আলু থেকে ১৭৫ ক্যালরি আসে। মাত্র ২০ ক্যালরি মাংস, ৫৫ ক্যালরি দুধ ও ডিম থেকে, কোমল পানীয় থেকে ৪০ ক্যালরি এবং মাছ থেকে ৫২ ক্যালরি খাদ্যশক্তি নেয় বাংলাদেশের মানুষ।
এফএওর হিসাবে বাংলাদেশ ২২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে চাল, মসুর ডাল, আলু, পেঁয়াজ, চায়ের মতো পণ্য যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফল। গত এক দশকে কুমড়া, ফুলকপি ও সমজাতীয় সবজির মতো কিছু পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ শীর্ষ তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে।