দেশে চোখের কৃত্রিম লেন্সের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ২৯টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের ১২৯ ধরনের লেন্সের দাম নির্ধারণ করেছে ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। যেখানে সর্বনিম্ন লেন্সের দাম ১৪৩ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও উপপরিচালক নুরুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘লেন্সের দাম কমেনি তবে একটা মূল্য নির্ধারণ হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে নৈরাজ্য চলছিল।
যে যার মতো রোগীদের কাছ থেকে দাম নিচ্ছিলেন। তাই আমরা এবার এটি নির্ধারণ করে দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘খুচরা মূল্য, নিবন্ধন নম্বর, প্রস্তুতকারক দেশের নাম এবং মেয়াদ উল্লেখ থাকলে চিকিৎসাসামগ্রী কেনাবেচায় স্বচ্ছতা আসবে। এতে বেশি লাভবান হবে দরিদ্র রোগীরা।
অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, দেশে নিবন্ধনহীন ব্র্যান্ডের হাজারেরও বেশি লেন্স ব্যবহার হচ্ছে। তবে বিদেশ থেকে আমদানি করা ১২ দেশের ২৯টি ব্র্যান্ডের লেন্সের মূল্য ঠিক হয়েছে। এগুলো বিভিন্ন দেশে তৈরি। এগুলোর গুণ ও মানেও ভিন্নতা আছে। তাই বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মূল্যের এমআরপিতে পার্থক্য আছে।
গতকাল বুধবার অধিদপ্তরের দেওয়া ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, লেন্সের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। রোগীকে লেন্সের নাম, সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য এবং উৎপাদক দেশের নাম উল্লেখ করে ক্যাশমেমো দিতে হবে। ফ্যাকো সার্জারির পর রোগীকে লেন্সের প্যাকেট সরবরাহ করতে হবে। একই সঙ্গে লেন্সের প্যাকেটের গায়ে উৎপাদন তারিখ, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, উৎপাদক দেশ এবং সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য উল্লেখ থাকতে হবে, যাতে সার্জনরা সেটি দেখে নির্দেশনা দিতে পারেন।
অধিদপ্তরের মূল্য নির্ধারণী তালিকা বিশ্লেষণে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ৪৯ ধরনের লেন্স আমদানি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এরপর ভারত থেকে আমদানি হচ্ছে ৪২ ধরনের লেন্স। যুক্তরাজ্য থেকে ১১ ধরনের। থাইল্যান্ড, বেলজিয়াম, জার্মানি, বার্বাডোজ ও হাঙ্গেরি থেকে চার ধরনের, সিঙ্গাপুর, জাপান ও গ্রিস থেকে দুই ধরনের এবং স্পেন থেকে এক ধরনের লেন্স আমদানি হচ্ছে।
নুরুল আলম বলেন, ‘আমদানিকারক ও হাসপাতালগুলো নির্ধারিত দামে লেন্স বিক্রি করছে কিনা তা মনিটর করবে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এর পরও কোনো আমদানিকারক বা হাসপাতাল যদি বেশি দামে লেন্স বিক্রি করে, তাহলে ওষুধ ও কসমেটিক আইন অনুযায়ী ওষুধের অতিরিক্ত দাম রাখায় দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা দুই লাখ টাকা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।’
দেশে মোট কতটি ব্র্যান্ডের লেন্স আছে জানতে চাইলে উপপরিচালক বলেন, ‘এ বিষয়ে অধিদপ্তরের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে তা চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। এ কাজে ব্যবসায়ী ও চক্ষুরোগ চিকিৎসার বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোর সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।’
চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শরফুদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যদি কারো চোখে ছানি রোগ থাকে। তাদের এ কৃত্রিম লেন্স ব্যবহার করতে হয়। প্রথমে অস্ত্রোপচার করে এই ছানি সরানো হয়। এরপর কৃত্রিম স্বচ্ছ লেন্স প্রতিস্থাপন করা হয়, যা ইন্ট্রাঅকুলার লেন্স নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে রোগী আগের মতো পরিষ্কার দেখতে পান।’
অধ্যাপক ডা. শরফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আগে আমরা ছানি রোগীদের এক হাজার পাওয়ারের একটা মোটা চশমা দিতাম। এ চশমা পরার পরে মানুষ শুধু সামনে দেখতে পেত। আশপাশে দেখতে পেত না। এখন কৃত্রিম একটা লেন্স চোখের মধ্যে বসিয়ে দিলে বাইরের কেউ বুঝতে পারে না চোখের অপারেশন হয়েছে। দূরে দেখতে কোনো চশমা লাগে না। কাছে দেখতে চশমা লাগে। দূরে কাছে দুই জায়গায় দেখা যায় এমন লেন্সও আছে।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন চিকিৎসাসামগ্রীর মূল্য নির্ধারণ থাকলে সাধারণ মানুষের সুবিধা হলো রোগী তার পছন্দমতো ব্র্যান্ডের নির্ধারণ করতে পারে, দাম ও মানের বিষয় স্বচ্ছ থাকে। চাইলেই কেউ ঠকাতে পারবে না।’