জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো প্রবর্তন করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’। আর এ পদে মনোনয়ন পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ। শনিবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫২তম সিন্ডিকেট সভায় ড. রশিদকে বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
গতকাল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক মো. আতাউর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ড. হারুন -অর-রশিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে বিএ (অনার্স) ও এমএ উভয় পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে ১৯৮৩ সালে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়ে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়, সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাপানের রিউকোকু বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা করেন। ১৯৭৯ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে যোগ দেন। সিলেকশন গ্রেড প্রফেসর হিসেবে অবসরগ্রহণ করেন তিনি।
ড. হারুন-অর-রশিদ ৪৩ বছরের দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই মেয়াদে সফলভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যও ছিলেন তিনি। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের তিন বার নির্বাচিত ডিন, স্যার এ এফ রহমান হলের প্রভোস্টের দায়িত্বও পালন করেন।
বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির জেনারেল সেক্রেটারি, সহ-সভাপতি, কাউন্সিল সদস্য, অধ্যাপক শামসুল হক শিক্ষা কমিটির সদস্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন হারুন-অর-রশিদ। সর্বশেষ তিনি জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউটের বাংলাদেশ চেয়ারে ‘বঙ্গবন্ধু প্রফেসরিয়াল ফেলো’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ড. রশিদ বঙ্গবন্ধু গবেষণায় ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২১’ অর্জন করেন। ২০১৬ সালে বেস্ট পাবলিকেশনসের জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ স্বর্ণপদক লাভ করেন। ড. রশিদ এ পর্যন্ত ১৯টি মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ রচনা করেছেন। দেশে-বিদেশে জার্নালে তাঁর ১০০টি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ৬টি প্রসিদ্ধ বইয়েরও সম্পাদনা করেছেন।
এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলন বিষয়ক ৭টি বইয়ের সম্পাদনা করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গবেষণা-গ্রন্থ হচ্ছে- বাংলাদেশের ৫০ বছরের রাজনীতি অনুধাবন: সংগ্রাম, অর্জন ও চ্যালেঞ্জ। বিশ্বখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা রাউটলেজ লন্ডন ও নিউইয়র্ক থেকে একযোগে বইটি প্রকাশ করছে।
এছাড়া তাঁর অন্যান্য গবেষণা গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- দ্য ফোরস্যাডোয়িং অব বাংলাদেশ, ফর্ম ১৯৪৭ পার্টিশন টু বাংলাদেশ: বঙ্গবন্ধু এন্ড স্টেট ফর্মেশন ইন পারসপেকটিভ, ইনসাইড বেঙ্গল পলিটিক্স, বাঙালির রাষ্ট্রচিন্তা ও স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়, বাংলাদেশ: রাজনীতি, সরকার ও শাসনতান্ত্রিক উন্নয়ন ১৭৫৭-২০০০, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পুনর্পাঠ, ‘আমাদের বাঁচার দাবী : ৬ দফার ৫০ বছর’, মূলধারার রাজনীতি : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কাউন্সিল ১৯৪৯-২০১৬, ৭ই মার্চের ভাষণ কেন বিশ্ব ঐতিহ্য সম্পদ: বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ, বঙ্গীয় মুসলিম লীগ পাকিস্তান আন্দোলন: বাঙালির রাষ্ট্রভাবনা ও বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ: গভর্নেন্স, পলিটিক্স, কনস্টিটিউশনাল ডেভেলপমেন্ট ১৭৫৭-২০১৮, ৭ই মার্চ থেকে স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব কী ও কেন, বঙ্গবন্ধুকোষ, সোহরাওয়ার্দী বনাম বঙ্গবন্ধু, ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা প্রভৃতি। ড. রশিদ বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিতে ২০ খন্ডে ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এনসাইক্লোপিডিয়া’ রচনা প্রকল্পের প্রধান সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এনসাইক্লোপিডিয়া’ এর ইংরেজি বই রচনা প্রকল্পের প্রধান সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে ড. রশিদ এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক।