আনুষ্ঠানিকভাবে কক্সবাজার থেকে যাত্রা শুরু করছে ঢাকাগামী ট্রেন। এর মধ্যে দিয়ে কক্সবাজার জেলাসহ বৃহত্তর দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর শত বছরের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিলো।
যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলকে ঘিরে কক্সবাজারের স্থানীয়দের মধ্যে আনন্দ ও উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
পূর্ব নির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী শুক্রবার দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ যাত্রা শুরু করে। বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার গোলাম রব্বানী জানান, প্রথম ট্রেন দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এতে যাত্রী ছিল ১ হাজার ৩০ জন।
কক্সবাজার থেকে ঢাকা যেতে ট্রেনটির ৮ ঘণ্টা ৩০ মিনিট সময় লাগবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। সেই হিসেবে রাত ৯টায় এই ট্রেন ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। ফিরতি ট্রেন কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ঢাকার কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যাবে রাত সাড়ে ১০টায়।
এই রুটে ট্রেনের গতিসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার। কয়েক দফা পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের সফল কার্যক্রম শেষে এই বছরের ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার নতুন এই রেলপথে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করেন।
চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক রতন কুমার চৌধুরী বলেন, শুক্রবার থেকে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। এই ট্রেন নিয়ে মানুষের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত টিকিট বিক্রি শেষ। আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছি।
উন্মোচিত হলো সম্ভাবনার নতুন দুয়ার
এই রুটে ট্রেন চলাচলকে কেন্দ্র করে পর্যটকসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ এবং উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। কক্সবাজারে পর্যটন শিল্পের জন্য তৈরি হয়েছে নতুন সম্ভাবনা।
কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার গোলাম রাব্বানী বলেন, বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচলের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টায় কক্সবাজার স্টেশন থেকে ৭৮০ জন যাত্রী নিয়ে প্রথম ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। অপরদিকে রাত সাড়ে ১০টায় সমান সংখ্যক যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে আরেকটি ট্রেন কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে।
তিনি জানান, এই রুটে আপাতত দুটি ট্রেন চলাচল করবে। প্রতিদিন কক্সবাজার থেকে ট্রেন ছাড়বে দুপুর সাড়ে ১২টায়। চট্টগ্রাম হয়ে এটি ঢাকায় পৌঁছাবে রাত ৯টা ১০ মিনিটে। অন্যদিকে ঢাকা থেকে ট্রেন ছাড়বে রাত সাড়ে ১০টায়। এটি কক্সবাজার পৌঁছাবে পরদিন সকাল ৭টা ২০ মিনিটে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, নতুন এই ট্রেনে মোট ১৬টি কোচ রয়েছে। আসন রয়েছে ৭৮০টি। ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯৫ টাকা। এসি চেয়ারের ভাড়া ১ হাজার ৩২৫ টাকা, এসি সিটের ভাড়া ১ হাজার ৫৯০ টাকা এবং এসি বার্থের ভাড়া (ঘুমিয়ে যাওয়ার আসন) ২ হাজার ৩৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের দোহাজারি থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ স্থাপন প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের জুন মাসে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হয় প্রায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা।
এবছরের ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই রেলপথের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।