প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে হবে এই দৈন্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা ভোগে না। আমার কাছে ক্ষমতা বড় না, দেশের স্বার্থ বড়।
আজ রোববার ( ১২ নভেম্বর) নরসিংদী জেলায় ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তিনি। এরপর সেখানে আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে আমেরিকার গ্যাস বিক্রি প্রস্তাব প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার কাছে ক্ষমতার চেয়ে দেশের মানুষের স্বার্থ বড়। যদি ক্ষমতাই বড় হতো তাহলে ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গ্যাস বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে পারতাম। কিন্তু আমি গ্যাস বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় অনেকটা জোড় করেই আমাদের ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে আমরা সরকারে আসতে পারিনি। আমরা ভোট বেশি পেয়েছিলাম, জনগণের সমর্থন আমাদের ছিল। নির্বাচনটা যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতো, তাহলে আওয়ামী লীগই সরকার গঠন করত। কিন্তু তখন আমি একটা বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হই। সেই বিষয়টি অনেকেই জানেন না। সেই সময় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আমার কাছে বাংলাদেশের গ্যাস বিক্রির একটি প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু আমি রাজি হইনি। আমি চেয়েছিলাম, আমার দেশের মানুষের জন্য এই গ্যাস ব্যবহার হবে। বিদ্যুৎপ্ল্যান্ট করব, সার কারখানা করব, দেশের মানুষের চাহিদা মেটাতে হবে এবং ৫০ বছরের রিজার্ভ রাখতে হবে। এরপর উদ্বৃত্ত যদি থাকে, সেটুকু আমরা বিক্রি করব, এর বাহিরে নয়। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশে দেশে এসেছিলেন। আমাকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে সেই একই গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে যখন লতিফুর রহমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হন। তার বাড়িতে আমাদের দাওয়াত দিয়েছিল। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমি এবং দলের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান সাহেব গিয়েছিলাম। আর বিএনপির পক্ষ থেকে খালেদা জিয়া ও মান্নান ভূঁইয়া গিয়েছিলেন। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টার আসেন এবং আমাদের সেই একই প্রস্তাব দেন। সেখানেও আমি দেশের মানুষের জন্য গ্যাস রেখে উদ্বৃত্তটা বিক্রি করার কথা চিন্তা করব বলে জানিয়েছিলাম। কারণ দেশের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে হবে- এমন দৈন্যতায় অন্তত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা ভোগে না। আমার কাছে ক্ষমতা বড় না। কিন্তু খালেদা জিয়া গ্যাস বিক্রি করতে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। আমার চোখের সামনেই জিমি কার্টার তার পিঠে হাত দিয়ে খুব বাহবাও দিয়েছিলেন। তখন আমি জিল্লুর রহমানকে বলেছিলাম, ‘চাচা এখন চলেন, আমরা বুঝতে পেরেছি কি হবে। কিন্তু আমি এটা কেয়ার করি না। আমার কাছে ক্ষমতা বড় না। আমার কাছে দেশের মানুষের স্বার্থ বড়।’
সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের নির্বাচনে (২০০১ সালের) হারানোর জন্য শুধু বিদেশিদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমার দেশেরও কিছু জ্ঞানী-গুণী মুরব্বী তারাও উঠে-পড়ে লাগলেন যে, কীভাবে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে হারানো যায়। আমাদের নেতাকর্মীরা কেউ ঘরে থাকতে পারেনি। তাদের উপর অকথ্য অত্যাচার শুরু হয়েছিল। সেইভাবে বলতে গেলে অনেকটা জোড় করেই আমাদের ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এসে কী করেছে? যেখানে আমরা আমাদের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করেছিলাম, বিনিয়োগ বাড়িয়েছিলাম। সেখানে তারা সেটিকে ধীরে ধীরে কমাতে শুরু করে।