এমসিসির ২০ সূচকের ১৭টিতে রেড জোনে বাংলাদেশ

উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আর্থিক সহায়তা সংশ্লিষ্ট মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশনের (এমসিসি) সূচকে বাংলাদেশের আরো অবনতি হয়েছে। মার্কিন এ সংস্থার বিশটি সূচকের মধ্যে ১৭টিতেই বাংলাদেশের অবস্থান রেড জোন বা খারাপ। গত বছর ছিল ১৬টি। ২০০৪ সাল থেকে প্রতিবছর রেড জোন বা খারাপ ও গ্রিন জোন বা ভালো সংকেত দিয়ে সূচকের মান প্রকাশ করছে এমসিসি। এ সূচকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির মূল্যায়ন করা হয়।

গত মঙ্গলবার প্রকাশিত সূচকে দেখা যায়, মাত্র তিনটিতে পাশ করেছে বাংলাদেশ। এগুলোকে গ্রিন জোন হিসাবে দেখিয়েছে এমসিসি। বাকি ১৭টি আছে রেড জোনে। গত বছরের সার্বিক সূচকও একই ছিল। তবে ২০২২ সালে রেড জোনে ছিল ১৬টি। এর আগের বছরগুলোয় আরও ভালো ছিল। বেশ কিছু আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানের সূচকের ভিত্তিতে এ তালিকা প্রকাশ করে ওয়াশিংটনভিত্তিক এমসিসি।

সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সূচক নির্বাচন প্রক্রিয়ার একটি মূল উপাদান। এটা নির্ধারণ করে কোন দেশ ২০২৪ থেকে পাঁচ বছরের জন্য অনুদান চুক্তির যোগ্য। ৮০টি দেশের মধ্যে এবার ২৫টি দেশ পাশ করেছে। ফেল করেছে ৫৫টি দেশ। এমসিসির তহবিলের জন্য কোনো দেশকে অবশ্যই প্রতিটি বিভাগ থেকে একটি সূচকসহ অন্তত ১০টিতে পাশ করতে হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রাজনৈতিক অধিকার বা নাগরিক স্বাধীনতা ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ। তালিকায় ন্যায়সংগত শাসন ক্যাটাগরির ছয়টি সূচকের একটিতেও পাশ করেনি বাংলাদেশ।

এর মধ্যে রাজনৈতিক স্বাধীনতা সূচকে ৪০-এর মধ্যে ১৫, নাগরিক স্বাধীনতায় ৬০-এর মধ্যে ২৫, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ১.৫-এর মধ্যে মাইনাস ০.৫৩, সরকারের কার্যকারিতায় ১.৫-এর মধ্যে মাইনাস ০.৩৪, আইনের শাসনে ১.৫-এর মধ্যে মাইনাস ০.২৮ এবং তথ্যপ্রাপ্তির অধিকারে ৯৫-এর মধ্যে ৩২.৩ পেয়েছে বাংলাদেশ। শেষের এই সূচকটিতে এক বছরের মধ্যে ৮ পয়েন্ট কমেছে। একইভাবে স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় খরচ, প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষা, মেয়েদের নিম্ন মাধ্যমিক শিক্ষা, শিশু স্বাস্থ্য, জেন্ডার অর্থনীতি, ভূমিতে অধিকার, কর্মসংস্থানের সুযোগ ও ঋণপ্রাপ্তিতে রেড জোনে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। শুধু অর্থনৈতিক স্বাধীনতা তালিকায় আর্থিক নীতি ও মুদ্রাস্ফীতি এবং টিকাদানের হারে গ্রিন জোনে বাংলাদেশ।

জানা যায়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) পক্ষ থেকে দীর্ঘ কয়েক বছর চেষ্টা করেও এমসিসি তহবিলে যুক্ত হতে পারছে না বাংলাদেশ। ইআরডি কর্মকর্তারা জানান, এমসিসি তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে এই মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। তারা বাংলাদেশ সরকারের তথ্য গ্রহণ করতে চায় না। এই কর্মসূচির আওতায় সাধারণত ১০ থেকে ৫০ কোটি বা তারও বেশি মার্কিন ডলার অনুদান দেওয়া হয়। জানা যায়, এমসিসির তালিকায় বাংলাদেশে ক্রমাগত অবনতি হচ্ছে। ২০২২ সালে রেড জোনে ছিল ১৬টি সূচক, ২০২১ সালে ১৩টি সূচক, ২০২০ সালে ১২টি, ২০১৯ সালে ১১টি, ২০১৮ সালে ৭টি ও ২০১৭ সালে ছিল ১০টি সূচক। এর আগে ২০১৬, ২০১৫ ও ২০১৪ সালের রেড জোনে ছিল ৯টি করে সূচক।

গত বছরের সূচক প্রকাশের পর বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেছিলেন, এ প্রতিবেদনে যে অবনতিশীল অবস্থা ফুটে উঠেছে, তার সঙ্গে দ্বিমত করার সুযোগ নেই। এমন মূল্যায়ন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের অবস্থা কোথায় নিয়ে যায়, তা সহজেই অনুমেয়।

Scroll to Top