তিস্তাসহ অমীমাংসিত ইস্যু আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে দুই দেশের শীর্ষ নেতার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ তাগিদ দেন তাঁরা। তাঁরা এ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারেও একমত হয়েছেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকালে নয়াদিল্লির লোককল্যাণ মার্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে দেড় ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে ৮ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে গতকাল দুপুরে নয়াদিল্লিতে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে (স্থানীয় সময়) নয়াদিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরে পৌঁছার পর ভারতের রেলওয়ে ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী দর্শনা জার্দোস প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান।
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা ও মোদির এই বৈঠক নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষ আগ্রহ ছিল। নির্বাচন ঘিরে সরকারের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতকে পাশে চায় সরকার। ধারণা করা হচ্ছিল, বৈঠকে দুই নেতা তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করবেন। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়নি। তবে তাদের একান্ত বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানেন না তিনি।
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের জানান, অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দুই নেতার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উভয় প্রধানমন্ত্রী দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করেন। এ সময় তাদের মাঝে একান্ত বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে তিস্তা ও অমীমাংসিত ইস্যু আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের তাগিদ দিয়েছেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী।
মোমেন জানান, উভয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভারতের বিদ্যমান গভীর সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং এই সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণে একমত হয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী সেদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিদ্যমান শান্তিপূর্ণ অবস্থা নিশ্চিতকরণে অবদান রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, এ সময় শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অবদান গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন এবং তাকে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে নিমন্ত্রণের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি আরও জানান, দুই প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আগে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এগুলো হলো : কৃষি গবেষণায় সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও দুই দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে আর্থিক লেনদেন সহজীকরণ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত আমাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। প্রধানমন্ত্রী ভারত থেকে আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ভারত সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দ্রুত প্রত্যাবাসন বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সহযোগিতা কামনা করেছেন। এছাড়া ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে কানেক্টিভিটি তথা রেল ও সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে চলমান প্রচেষ্টা এবং কার্যক্রম বেগবান করতে উভয় প্রধানমন্ত্রী একমত হয়েছেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে কথা হয়নি। তবে তাদের একান্ত বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কিনা, জানি না।
বৈঠকের পর টুইটারে (বর্তমানে এক্স) পোস্ট দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। সেখানে তিনি লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। গত ৯ বছরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অগ্রগতি খুবই সন্তোষজনক। আমাদের আলোচনায় কানেক্টিভিটি, বাণিজ্যিক সংযুক্তি এবং আরও অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল।