ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢাকা কাস্টমসের সুরক্ষিত গুদাম থেকে সাড়ে ৫৫ কেজি স্বর্ণ চুরির ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে বিমানবন্দরের কাস্টমসের বাইরের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করছে গোয়েন্দা পুলিশ। এ ঘটনায় যেই জড়িত থাকুক, সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
গতকাল (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘মামলার দায়িত্ব পাওয়ার পর বিমানবন্দরের ঢাকা কাস্টম হাউসের গুদামে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেছি অর্থাত্ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আটজনকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এর মধ্যে চারজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও চারজন সিপাহি।’
ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ আরও বলেন, ‘বিমানবন্দরের মতো একটা জায়গা যেখানে কঠোর নিরাপত্তা সেখানে এতবড় একটা চুরির ঘটনা, এটা আমরা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। পাশাপাশি গত চার-পাঁচ মাস গুদামে কারা কারা গিয়েছে সেটিও তদন্তে আনা হবে। সিসি ক্যামেরার পর্যবেক্ষণ, দায়িত্ব পালন ও জিজ্ঞাসাবাদের পরে বলা যাবে আসলে ঘটনাটি কীভাবে হয়েছে এবং কারা ঘটিয়েছে। এক কর্তৃপক্ষ স্বর্ণগুলো আরেক কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করল। কিন্তু তারা কীভাবে বুঝিয়ে দিল আর যারা বুঝে নিল তারাইবা কীভাবে বুঝে নিয়েছে সকল বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্তে চলছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে আমরা এটি তদন্ত শেষ করব।’
যে আটজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তারা কোনো তথ্য দিয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনও সেই পর্যায়ে যায়নি। পরবর্তীতে সব জানানো হবে। বিমানবন্দরের ঢাকা কাস্টম হাউসে তদন্ত করতে গেলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে তদন্তে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে কি না জানতে চাইল হারুন অর রশীদ বলেন, ডিবি স্বাধীনভাবে তদন্ত করবে। কোনো ধরনের ব্যাঘাত ঘটবে না। কাস্টম হাউসের কর্তৃপক্ষ অনেক আন্তরিক, আমরা বলার পরে তারা সঙ্গে সঙ্গে আটজনকে আমাদের কাছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঠিয়েছে।’
যে আটজনকে কাস্টম কর্তৃপক্ষ পাঠিয়েছে তারা কি এই স্বর্ণ চুরির সঙ্গে জড়িত নাকি নাকি আরও শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা জড়িত? এমন প্রশ্নের জবাবেব তিনি বলেন, ‘চুরির সঙ্গে জড়িত শীর্ষ পর্যায়ের কেউ থাকলেও আমরা খুঁজে বের করব। সিসি ক্যামেরা নষ্ট ছিল কিংবা গুদাম থেকে সিসি ক্যামেরা গায়েবের বিষয়েও তদন্তে আনা হবে।’
স্বর্ণ গায়েবে ‘রাজস্ব কর্মকর্তা সিপাহি সিন্ডিকেট’: এদিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢাকা কাস্টম হাউসের গুদাম থেকে ৫৫ কেজি স্বর্ণ গায়েবে তিনজন জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। কাস্টমসের দুই সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) ও এক সিপাহিকে গুদাম থেকে স্বর্ণ চুরির প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। তারা হলেন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম শাহেদ, মো. শহিদুল ইসলাম ও সিপাহি নিয়ামত হাওলাদার।
তিনজনকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হলেও গুদাম থেকে স্বর্ণ গায়েব সিন্ডিকেটের শিকড় আরও অনেক গভীরে বলে তথ্য পাচ্ছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। মামলাটি থানা পুলিশ থেকে ডিবিতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দর জোনের অতিরিক্ত কমিশনার তৌহিদুল ইসলাম।
কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, সন্দেহভাজন দুই রাজস্ব কর্মকর্তার মধ্যে শাহেদ ঢাকা কাস্টম হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তার খুব আস্থাভাজন। সম্প্রতি এই কর্মকর্তাকে গুদাম থেকে বদলি করে হাউসের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও লোভনীয় শাখা এয়ারফ্রেইটে বদলি করা হয়। সাধারণত কাস্টম হাউসের কমিশনারের সবচেয়ে কাছের এবং বিশ্বস্ত লোকদের এই শাখায় বদলি করা হয়ে থাকে। শাহেদকেও সেখানে পাঠানো হয়েছিল। তবে স্বর্ণ গায়েবের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর তড়িঘড়ি করে সেই বদলির আদেশ স্থগিত করা হয়। আর স্বর্ণ চুরিতে শাহেদের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় শীর্ষ কর্মকর্তার যোগসাজশ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
সূত্রে জানা গেছে, মামলার তদন্ত শুরুর পর থেকে মূল হোতাদের আড়াল করতে ঢাকা কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ নানাভাবে অসহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে। গুদামে থাকা মালপত্রের পূর্ণাঙ্গ তালিকা চাওয়া হলেও তা মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দেয়নি তারা। আর চুরি যাওয়া ৫৫.৫১ কেজি স্বর্ণের মধ্যে বাজেয়াপ্ত করা স্বর্ণ ছিল ৪৭.৪৯ কেজি। যেগুলোর কোনো মালিকানা নেই। এই স্বর্ণের কেউ মালিকানা দাবি করতে আসবে না জেনেই পরিকল্পিতভাবে ৪৭.৪৯ কেজিসহ ৫৫.৫১ কেজি স্বর্ণ গায়েব করা হয়েছে বলে মনে করছেন কাস্টমস সংশ্লিষ্টরা।