বাংলাদেশে চার মাসে চার ভূমিকম্প

সংগৃহীত ছবি

১৫ দিনের মধ্যে আবারও ভূমিকম্প হলো সিলেটে। মঙ্গলবার দুপুর ১.১৩ মিনিটে ৩.৫ (মৃদু) মাত্রার ভূকম্পনটি হয় বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ নিয়ে মে থেকে শুরু করে আগস্ট মাস পর্যন্ত চার মাসে চারটি ভূমিকম্প হলো। প্রতিটি ভূমিকম্পেরই উৎপত্তিস্থল ছিল দেশের সীমানার ভেতর বা আশপাশে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত এক দশকে এত ঘন ঘন ভূমিকম্প হয়নি, যেমনটি ২০২৩ সালে হচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র জানান, গতকালের ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ঢাকা থেকে ১৯৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে সিলেটে। গুগলের অ্যানড্রয়েড আর্থকোয়েক অ্যালার্ট সিস্টেম তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলা থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) উপাচার্য ও ভূমিকম্প বিষয়ক গবেষক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার কালের কণ্ঠকে জানান, ভূমিকম্পটির উৎপত্তি সিলেটের জিন্দাবাজার থেকে ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে।

ভারতের ভূমিকম্পন পর্যবেক্ষণকারী সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি বলেছেন, ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল ছিল মাটির মাত্র পাঁচ কিলোমিটার গভীরে। স্থানীয়রা জানিয়েছে, বেশ কয়েক সেকেন্ড ভূমিকম্পটি স্থায়ী ছিল। এতে নগরবাসীর মনে আতঙ্ক দেখা দেয়। অনেকে বাসাবাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে দ্রুত রাস্তায় বেরিয়ে আসে। তবে গতকাল রাত ৯টা পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশে চার মাসে চার ভূমিকম্প

এক দশকে এত ঘন ঘন ভূমিকম্প দেখা যায়নি:

২০২৩ সালে ভূমিকম্পের সংখ্যা বেড়ে গেছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। গত মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত চার মাসের মধ্যে চারটি ভূমিকম্প অনুভূত হলো। সর্বশেষ গত ১৪ আগস্ট রাত ৮টা ৪৯ মিনিটে সিলেটসহ সারা দেশে ৫.৫ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের আসামের করীমগঞ্জের কাছে বাংলাদেশ সীমান্তে।

গত ১৬ জুন রাজধানীসহ সারা দেশে ৪.৫ মাত্রার মৃদু ভূমিকম্প হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটের গোলাপগঞ্জ। চলতি বছরের মে মাসের ৫ তারিখে ৪.৩ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প হয়েছে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার কাছে বিক্রমপুরের দোহার থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। এটির গভীরতা ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার।

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) উপাচার্য ও ভূমিকম্প বিষয়ক গবেষক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার জানিয়েছেন, গতকালের ভূমিকম্পটি বার্মা ও ইন্ডিয়ান প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত সাবডাকশন জোনে হয়েছে। এই জোন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, হাওর, মেঘনা নদীর মোহনা হয়ে বঙ্গোপসাগরের দিকে চলে গেছে। সাবডাকশন জোন বাংলাদেশে ভূমিকম্পের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।

হুমায়ুন আখতার আরো বলেন, ‘এ বছর সর্বশেষ কয়েকটি ভূমিকম্পের প্রায় সবই হয়েছে সাবডাকশন জোনের মধ্যে। এর আগে অল্প সময়ের মধ্যে এত ঘন ঘন ভূমিকম্প হয়নি। গত এক দশকে এত ঘন ঘন ভূমিকম্প হয়নি। গত বছরও সিলেটে ভূমিকম্প হয়েছে শহরের খুব কাছে। এগুলো সাবডাকশন জোনে সঞ্চিত বড় শক্তি বের হওয়ার পূর্বলক্ষণ বা আলামত।’

ভূমিকম্প বিষয়ক গবেষক অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘আমরা আমাদের গবেষণায় দেখেছি, এই জোনে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার শক্তিসম্পন্ন ভূমিকম্প সৃষ্টি হতে পারে। এই জোনে ৮০০ থেকে হাজার বছরের মধ্যে বড় ভূমিকম্প হয়নি। অর্থাৎ এত বছর ধরে এখানে শক্তি সঞ্চিত হচ্ছে। এই শক্তি একদিন না একদিন বের হবেই, এর কোনো বিকল্প নেই।’

বিশেষজ্ঞরা আরো জানান, ভূমিকম্পের উৎস সিলেট থেকে শুরু করে কক্সবাজার পর্যন্ত সাবডাকশন জোনের যেকোনো জায়গায় বড় ভূমিকম্প হলেও ক্ষয়ক্ষতি বেশি হতে পারে ঢাকায়, যেহেতু এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি। সেই সঙ্গে প্রস্তুতির অভাব, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, দুর্বল ভবনকাঠামোও বড় কারণ।