যুক্তরাষ্ট্র মোশতাক সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্কের সম্ভাবনা দেখেছিল

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর খন্দকার মোশতাকের প্রশাসনের সঙ্গে আরও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সম্ভাবনা দেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ১৬ আগস্ট, ১৯৭৫-এ ওয়াশিংটনে পাঠানো একটি তারের মাধ্যমে, ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিস বোস্টার বাংলাদেশে সামরিক অভ্যুত্থানের বিষয়ে তার প্রাথমিক চিন্তাভাবনা তুলে ধরেন।

ক্যাবলের তৃতীয় অনুচ্ছেদে তিনি বলেছিলেন, “এখন পর্যন্ত পাওয়া প্রমাণগুলো থেকে ইঙ্গিত মিলছে যে নতুন সরকারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক মুজিবের সঙ্গে সম্পর্কের চেয়েও বেশি সৌহার্দ্যপূর্ণ হতে পারে। নতুন রাষ্ট্রপতি (মোশতাক) অতীতে আশ্চর্যজনকভাবে তাঁর ‘আমেরিকানপন্থী’ মনোভাব প্রকাশ করেছেন”।

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের মতে, “পুরনো শাসনামলে (বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সরকার) যারা বামপন্থী ও আমেরিকাবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির জন্য পরিচিত ছিল (যেমন—শেখ মনি ও সামাদ) তারা এখন নেই।

উপরন্তু, রাষ্ট্রদূত বোস্টার তার তারে বলেছেন যে মোশতাক আহমেদের প্রশাসন আরও আমেরিকান সহায়তার জন্য অনুরোধ করার একটি ভাল সুযোগ রয়েছে। একমাত্র দেশ যারা সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারে তা হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মুশতাক একবার আমেরিকানদের বলেছিলেন।

বোস্টার লিখেছেন, মোশতাক যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের মতো বড় শক্তির সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ার আগ্রহের কথা বলেছেন।

মোশতাকের এই বক্তব্যের অর্থ ওই দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কে আরো ভারসাম্য আনা। একইভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে প্রভাব কিছুটা কমবে বলে বোস্টার ধারণা করেন।

রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর ২৪ ঘন্টার মধ্যে দেখা গেছে যে কেউ এই ঘটনার বিরোধিতা করেনি। ইতিমধ্যেই কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে যে নতুন প্রশাসন (মোশতাকের প্রশাসন) পাকিস্তান এবং সামগ্রিকভাবে মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করবে।

মোশতাকের প্রতি ভারতের বিদ্বেষ আছে। এর পরও মোশতাকের সরকার তাদের বিষয়ে নতুন করে ভারতের সন্দেহ জাগাতে চাইবে না। সম্ভবত ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ধারাবাহিকতা রক্ষার ইঙ্গিত হিসেবে নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় অনেক পুরনো মুখ রাখা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে বিপথগামী কিছু সেনা সদস্যের অভ্যুত্থান সফল হলেও নতুন সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান ছিলেন তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। তিনি লিখেছেন, বাঙালির রাজনৈতিক মঞ্চে এখন আর এমন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব নেই।

শেখ মুজিব অনেকদিন ধরে রেখেছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে যদি বেসামরিক প্রশাসন ব্যর্থ হয়, তাহলে সামরিক হস্তক্ষেপ আরও একবার প্রয়োজন হতে পারে।