১৫ আগস্ট শহীদদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

সংগৃহীত ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্ট নিহত শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। আজ ১৫ আগস্ট (মঙ্গলবার) সকাল ৭টায় তিনি শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

সকাল সাড়ে ৬টায় রাষ্ট্রপতি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তার প্রতিকৃতিতে যান। সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের অন্যান্য সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এরপর একে একে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার। শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচন কমিশনারদের নেতা। আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে কিছু বিপথগামী সেনা সদস্য ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে হামলা চালায়। বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি ও ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি ও আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়িতে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

নারী-শিশু-নির্বিশেষে হত্যা করে নৃশংসতার এক জঘন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে খুনিরা। বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত এবং তাঁর ছেলে আরিফ ও সুকান্তবাবু, মেয়ে বেবি, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মনি, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি এবং আত্মীয় আব্দুল নাঈম খান রিন্টুকে হত্যা করে খুনিরা।

বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁকে বাঁচাতে এসে সোবহানবাগে সেনা সদস্যদের গুলিতে নিহত হন বঙ্গবন্ধুর সামরিক সচিব কর্নেল জামিল। বিদেশে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পর বিশ্বজুড়ে বাঙালি জাতির ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নোবেলজয়ী পশ্চিম জার্মানির নেতা উইলি ব্রানডিট বলেন, মুজিবকে হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে তারা যেকোনো জঘন্য কাজ করতে পারে।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনিদের আইনের আওতায় আনার পথ রুদ্ধ করে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়। ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদ এ অধ্যাদেশ জারি করেন।

পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সকে আইন হিসেবে অনুমোদন করেন।

২১ বছর পর বঙ্গবন্ধুকে হত্যার বিচারের পথ খোলে। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৬ সালের ১৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তিন প্রধান আসামি বরখাস্ত লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই বছরের ১৪ নভেম্বর সংসদে ইনডেমনিটি আইন বাতিল করা হয়। একই বছরের ২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহকারী (পিএ) এ এফ এম মোহিতুল ইসলাম পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সংঘটিত নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় থানায় একটি এফআইআর করেন। মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ১৯৯৮ সালে রায়ে আদালত ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন।