প্রধানমন্ত্রী আজ ২২ হাজার গৃহহীন ঘর দেবেন

বিশ্ব অঙ্গনে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে সরকার কাজ করছে : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

একটি প্রবাদ অনুসারে, “জীবনের যুদ্ধ শুরু হয়” জন্ম থেকেই। এটি সম্ভবত মহররম শেখের সময় জন্মের আগে শুরু হয়। তিনি যখন মাতৃগর্ভে ছিলেন, তখন তার পিতা তাকে পরিত্যাগ করেন। মুহররম জন্মের আগে পিতৃহীন এবং ঠিকানাহীন ছিল। মা নানাবাড়ি গিয়েছিলেন। সুখ অবশ্য তাদের জীবনে আসেনি। সেই জীবনে অনিশ্চয়তার ভেলায় মা সবসময় লড়াই করে যাচ্ছেন। অন্যের বাড়িতে থেকেছেন। তিনি যা পেয়েছেন তা করার উপর। সেই অনিশ্চিত জীবন থেকে মহরমকে স্থায়ী ঠিকানা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বছরখানেক আগে পাবনার হেমায়েতপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে বাড়ি ও জমি পান তিনি। দুই কক্ষের ওই বাড়িতে মহরম শেখ, তার মা, স্ত্রী ও মেয়ে থাকে। যুগান্তরকে অতীতের স্মৃতি, সংগ্রামের জীবন, কষ্টের জীবন এভাবে দেখানো হয়েছে মহরম শেখ।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর উপহার বাড়ির সামনে মহরমের একটি ছোট বাগান তৈরি করা হয়েছে। বাড়ির তিন পাশে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগানো হয়েছে। যদিও আগে আমার শখ ছিল, তার কথা শুনে আমি সেগুলি অনুসরণ করতে পারিনি। এখন যেহেতু আমি নিজে থেকে বেঁচে আছি, আমি এই স্বার্থে লিপ্ত হতে পারি। তিনি বলেন, এখন অনেক ভালো আছি। মেয়ে স্কুলে পড়ে। তাকে নিয়ে ভবিষ্যৎ জীবনের নানা স্বপ্নের কথাও জানালেন মহরম শেখ।

হেমায়েতপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ডানদিকে ঢুকতেই চোখে পড়ে এক বয়স্ক মহিলা একাকী একটি রুমে বসে আছেন। কাছে গিয়ে কথা বলে জানতে পারলাম, তার নাম মর্জিনা খাতুন। নিজের সঠিক বয়স বলতে পারলেন না মর্জিনা। তবে মনে আছে স্বামী মারা গেছে যুদ্ধের বছর। এরপর হাসপাতালে আয়ার চাকরি করতেন মর্জিনা। এখন আর কিছুই করতে পারেন না। জায়গাজমি কিছুই ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে বাড়ি পেয়েছেন তিনিও। বঙ্গবন্ধুকন্যার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মর্জিনা খাতুন বলেন, আমার থাকার কোনো জায়গা ছিল না, পায়ের নিচে মাটি ছিল না। কত জায়গায় ঘুরে ঘুরে বেড়িয়েছি। এই ঘর পাওয়ার পর পায়ের নিচে মাটি পেয়েছি।

শুধু মহরম শেখ বা মর্জিনা খাতুনই নয়, তাদের মতো পাবনার হেমায়েতপুরের আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পেয়েছেন ৬৫ পরিবার। তাদের সবার জীবনের গল্পই প্রায় একই। এসব মানুষকে স্থায়ী ঠিকানা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পেয়েছেন পাকা ঘর। তাই এখন তারা নতুন ঘরে নতুন স্বপ্ন বুনছেন। সবার মুখে উজ্জ্বল হাসি। এখন আর তাদের ঘরের চিন্তা নেই। ঝড়-বৃষ্টিতে থাকতে আর কষ্ট হবে না। নতুন পাকা ঘর পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তারা।

প্রসঙ্গত, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্যোগ নেন দেশে একটি মানুষও গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবে না। এরই অংশ হিসাবে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি এ পর্যন্ত চার দফায় ২ লাখ ৩৮ হাজার ৮৫১টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। আজ বুধবার পঞ্চম ধাপে আরও ২২ হাজার ১০১টি গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবারকে ঘরসহ বাড়ি হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে আরও ১২টি জেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত হবে। এ নিয়ে মোট ২১টি জেলা গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত হবে।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে খুলনার তেরখাদার বারাসাত সোনার বাংলা পল্লী আশ্রয়ণ প্রকল্প, পাবনার বেড়া উপজেলার চাকলা আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আমানউল্যাহপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর হস্তান্তর করবেন। এর মধ্য দিয়ে ১২৩টি উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে। আগের ২১১টিসহ মোট ৩৪৩টি উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হবে।

স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে নোয়াখালী সফরে গিয়ে আশ্রয়হীনদের প্রথম পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন বঙ্গবন্ধু। তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রথম সরকার গঠনের পর ১৯৯৭ সালে আশ্রয়হীনদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি অর্থায়নে প্রথম উদ্যোগ হিসাবে গ্রহণ করেন ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে শেখ হাসিনা দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বাসস্থানের নিশ্চয়তার ঘোষণা দেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া জানান, সরকারি উদ্যোগে দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ভূমি ও গৃহ প্রদানের এ নজির পৃথিবীতে অনন্য। কারণ পৃথিবীর আর কোনো দেশে এত বিপুলসংখ্যক ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বাড়ি বিতরণ করা হয়নি।

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্যও স্থায়ী ঠিকানা : শুধু স্বাভাবিক মানুষই নয়, প্রধানমন্ত্রী আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য। তাদের (তৃতীয় লিঙ্গ) স্বীকৃতির পর নিজেদের স্থায়ী ঠিকানাও করে দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে পাবনা সদরের হেমায়েতপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পেয়েছেন ১০ জন। তারা হলেন-মিতুল, সুমি, ভাবনা, মিষ্টি, নদী, টুকটুকি, ঐশি, বেলা, মোকলেছুর রহমান, রিপ্তি। মিতুল তাদের ‘গুরু মা’। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ১০ জনকে ঘর দেওয়া হলেও থাকেন ১২ জন। এক পাতিলে রান্না করে খান সবাই। হাঁস, মুরগি, ছাগল, গরু আছে। সবাই মিলে আঙিনায় চাষ করছেন নানা ধরনের সবজি।

‘গুরু মা’ মিতুল বলেন, আমরা তো পরিবার ছাড়া। আগে কেউ ঘর ভাড়া দিতে চাইত না। আমাদের কোনো মেহমান এলে ওই বাসায় নেওয়া যেত না। বেশি মানুষ এলে ওপরের ভাড়াটিয়ারা কমপ্লেইন দিত। দুর্বিষহ জীবন ছিল। প্রধানমন্ত্রী আমাদের স্বীকৃতির পরে স্থায়ী ঠিকানাও দিয়েছেন। এখন আমরা অনেক ভালো আছি। আমরা জোরে মন খুলে হাসতে পারছি, কথা বলতে পারছি, আমাদের কমিউনিটির মানুষের সঙ্গে মিশতে পারছি। এখন নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখা এই মানুষগুলো বললেন, আঙিনায় নিজেরা নানা ধরনের সবজি লাগাই, হাঁস, মুরগি, গুরু, ছাগল আছে, সবাই মিলে পালি। সাতটি সেলাই মেশিন দিয়েছে সরকার। কয়েকজন সেই কাজও জানে। জেলা প্রশাসকের কাছে লেখাপড়া শেখার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন এই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলো। বললেন, আমরা চাই আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে হোক কিংবা অন্য যেভাবেই হোক, আমরা একটু বাংলা ও আরবি পড়াশোনা করব।