প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা

দেশবাসীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা - ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলের তৃণমূল সংগঠকদের উদ্দেশে বলেন, আমরা যাকেই মনোনয়ন দেই—ভাল-মন্দ, ভালো-মন্দ—তাকে বিজয়ী করতে আপনারা কাজ করবেন বলে কথা দিতে হবে। দীর্ঘ সভার সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এছাড়াও তিনি উপস্থিত সকল নেতৃবৃন্দকে দলের মনোনীত প্রার্থীদের সমর্থনে হাত বাড়াতে অনুরোধ করেন। এরপর নেতারা হাত তুলে অঙ্গীকার করেন।

সংসদে দলীয় নেতাদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মনোনয়ন দাখিলের পর কেউ যদি ভাবে, এই একটি আসন পেলে কী হবে আর না পেলে কী হবে, ক্ষমতায় আসব। আমি যদি আরেকটি আসন পাই; কিন্তু দেখা যাবে আপনি সব আসন হারাবেন।” ২০০১ সালের নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর বিএনপি যে নির্যাতনের শিকার হয়েছিল তা কি আপনাদের সবার মনে আছে? নাকি বিভ্রান্ত? আপনারা এখন বুঝতে পারছেন আগামী নির্বাচনে না জিতলে আমাদের নেতা-কর্মীরা নির্যাতনের শিকার হবে। আর বাংলাদেশ কোন অবস্থায় থাকবে?

তারা লুটপাট করবে। ওরা তো লুটেরা। সে হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করেছে, এবং এখন সে লন্ডনে সব ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে।
রোববার সকালে ‘শত সংগ্রাম ও হাজার গৌরবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার উৎসর্গ’ শীর্ষক বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

সকাল ৯টা থেকে তৃণমূলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গণভবনে প্রবেশ করেন। সকাল সাড়ে ১০টার পরপরই মঞ্চে প্রবেশ করেন আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী বক্তব্য দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ। আওয়ামী লীগ সভাপতি দলীয় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার পর তৃণমূল নেতাদের কথা শোনেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

আটটি বিভাগের প্রতিটিতে একাধিক জেলা ও উপজেলা নেতা বক্তব্য রাখেন।

সভায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদ, আওয়ামী লীগের জেলা, মহানগর, উপজেলা ও পৌর শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ মনোনীত জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা বা আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন। বিদ্রোহী প্রার্থী, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার মেয়র এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা।

সভায় তৃণমূলের নেতাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘মনোনয়ন যাকেই দিই। আমি কিন্তু ঘরে বসে থাকি না, সারা দিন কাজ করি। সংগঠনের কাজও করি। কোথায় কার কী অবস্থা সেটা কিন্তু ছয় মাস পর পর জরিপ করি। আমাদের এমপিদের কী অবস্থা, অন্য জনপ্রতিনিধিদের কী অবস্থা, তার একটা হিসাব নেওয়ার চেষ্টা করি। জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এর ওপর নির্ভর করছে আমাদের ক্ষমতায় যাওয়া বা না যাওয়া। সে কথাটা মাথায় রেখে, আমাদের ওপর ভরসা রাখতে হবে। আমরা যখন মনোনয়ন দেব অবশ্যই আমাদের একটা হিসাব থাকবে যে কাকে দিলে আমরা আসনটা ফিরে পাব।’

দলের নেতাদের অনেকেই একে অন্যের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার কাছে অভিযোগ জানান। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক এসএমএস দিলে, গিবত গাইলেই কিন্তু আমি তাদের কথা শুনব এমন না। এটা আমি স্পষ্ট বলে দিচ্ছি। কারণ আমার নিজের হিসাব-নিকাশ আছে। ৪২ বছর আপনাদের সঙ্গে আছি। ১৯৮১ সালে সভাপতি নির্বাচিত করেছেন। এরপর কিন্তু আমি প্রতিটি এলাকায় ঘুরে ঘুরে দেখেছি। ফলে আমার কিন্তু ধারণা আছে। কার অবস্থা কী সেটা বুঝেই কিন্তু আমরা মনোনয়ন দিই।’

বিরোধী দলের আন্দোলনের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের গণভবনে একটা ছাগলের তিনটা বাচ্চা আছে। দুইটা দুধ খায় আর একটা এমনিতেই লাফায়। বিএনপি-জামায়াত হলো ওই দুইটা। বাকিরা এমনিতেই লাফায় আর আন্দোলন আন্দোলন করে। এ ক্ষেত্রে আমাদের একমাত্র শক্তি আমাদের জনগণ।’

সরকার দল-মত-নির্বিশেষে সবার জন্য উন্নয়ন করছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঘর দিয়েছি। কে আওয়ামী লীগ, কে বিএনপি তা দেখিনি। কে ভূমিহীন সেটা দেখেছি। আমরা সেভাবেই উন্নয়ন করতে চাই।’

ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব পেলেন:

সভায় পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কানাই লাল বিশ্বাস আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব চান। এ সময়ে তাঁকে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেন শেখ হাসিনা। এরপর আরো একাধিক জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতিও পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব চান। শেখ হাসিনা তখন সব জেলা, উপজেলা মহানগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে যাঁরা ভারপ্রাপ্ত হিসেবে আছেন, তাঁদের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেওয়ার ঘোষণা দেন।

জনপ্রিয় ব্যক্তি ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি:

সভায় উপস্থিত সূত্র জানায়, তৃণমূলের একাধিক নেতা বক্তব্যে ত্যাগী, জনপ্রিয় ব্যক্তি ও দুর্দিনের ছাত্রলীগ নেতাদের মনোনয়ন দেওয়ার অনুরোধ জানান। হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী বলেন, আগামী নির্বাচনে ছাত্রলীগ থেকে উঠে আসা নেতাদের মনোনয়ন দেওয়ার পাশাপাশি দলের কাজে লাগানো দরকার। জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমার দাস আগামী দিনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে জনপ্রিয়দের অগ্রাধিকার দেওয়ার অনুরোধ জানান। নির্বাচনের আগেই জেলার সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলন দেওয়ার অনুরোধ জানান।

কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, সব ভেদাভেদ ও কোন্দল দূর করে আগামী জাতীয় নির্বাচনেও জেলার ছয়টি আসনেই নৌকার বিজয় উপহার দেওয়া হবে। তিনি জরিপের ভিত্তিতে জনপ্রিয়দের মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান।

এমপির ওপর ক্ষোভ তৃণমূলের নেতাদের:

একাধিক সূত্র জানায়, সভায় কয়েকজন নেতা তাঁদের বক্তব্যে সংসদ সদস্যদের ভূমিকার সমালোচনা করেন।

পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর বলেন, জেলার তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ভালো নেই। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই দলের দুস্থ ও গরিব নেতাকর্মীদের খোঁজখবর রাখেন না। জেলার সব উপজেলায় সাংগঠনিক অবস্থা ভালো আছে। কিন্তু বাউফল উপজেলায় অনেক দিন যাবৎ বিরোধ চলছে। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের গ্রুপিংয়ের কারণে প্রায়ই সেখানে মারামারির মতো ঘটনা ঘটছে। নির্বাচনের আগেই এই সমস্যা সমাধানে দলের সাধারণ সম্পাদকের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

শেখ হাসিনার উদ্দেশে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ তালুকদার বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা আজকে আপনার সামনে কমিটমেন্ট করে যাব যে আমরা দলের ভেতরে কোনো বিভাজন করব না। নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াব। মানুষের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বাড়াব। এখান থেকে বের হয়ে দলবল নিয়ে গিয়ে এলাকায় গ্রুপিং করব, এটা যেন না হয়। যাকেই মনোনয়ন দেবেন আমরা তার পক্ষেই কাজ করব। উপজেলাগুলোতে কমিটি করে আমরা কাজ করছি। কিন্তু সমন্বয়ের অভাবে আমরা কাজগুলো স্থায়ী রাখতে পারছি না।’

বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, ‘অনেকেরই এমপি হওয়ার স্বপ্ন থাকতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’ দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলতাফুজ্জামান মিতা অভিযোগ করেন, দিনাজপুরের একজন সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে আসছেন। ওই সংসদ সদস্য দলীয় শৃঙ্খলা মানেন না। যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন অভিযোগ তোলেন, এমপিরা নেতাকর্মীদের কোনো খোঁজখবর রাখেন না।

আরো যা বললেন তৃণমূলের নেতারা:

লালমনিরহাট জেলার সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান আগামী দিনে সেখানে লাঙ্গল না দিয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার দাবি জানান। এরপর তিনি লালমনিরহাটের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন। লালমনিরহাট লাল হয়ে গেছে বলে প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী।

ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নিজাম হাজারী দাবি করেন, খালেদা জিয়া সেখানে জন্মগ্রহণ করার পর থেকে এলাকাটি আগে বিএনপির শক্ত ঘাঁটি ছিল। জেলার প্রতিটি এলাকায় গত  সাড়ে ১৪ বছরে পরিমাণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ফলে জেলার ভোটের ধরনও পাল্টে গেছে। আওয়ামী লীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কার্যালয় ফেনীতে।