সেপ্টেম্বরে শুরু হবে রূপপুরে উৎপাদন, যোগ দিতে পারেন পুতিন

সেপ্টেম্বরে শুরু হবে রূপপুরে উৎপাদন, যোগ দিতে পারেন পুতিন
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র - সংগৃহীত ছবি

আগামী সেপ্টেম্বরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হবে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লালাদিমির পুতিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।

আজ শনিবার বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) আবিষ্কৃত দেশের প্রথম স্মার্টফোনভিত্তিক ‘সৌরবিদ্যুৎ’ অ্যাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলন কপ-২৬’এ বিশ্ব নেতাদের সামনে ২০৪১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার করতে চায় এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেলক্ষ্যে দেশের গ্রামীণ অংশে ব্যাপক ব্যবহার চলছে সৌরবিদ্যুতের। তবে এই প্রযুক্তির ব্যবহারে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রতারণাসহ ব্যাপক হয়রানির স্বীকার হয় ভোক্তারা। এ লক্ষ্যেই বিসিএসআইআর উদ্ভাবন করেছে সৌরবিদ্যুৎ অ্যাপ। নিজস্ব বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেশে প্রথমবারের মতো তৈরি করা হলো এই অ্যাপ।

বিসিএসআইআরের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আফতাব আলী শেখ বলেন, সৌরবিদ্যুৎ প্রযুক্তি স্থাপন ও এর রক্ষণাবেক্ষণসহ সবকিছু নিজেই করতে পারবেন ভোক্তারা। এমনকি পরবর্তীতে কোন যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দিলে এই অ্যাপ ব্যবহারের মধ্যেমে তা সমাধানের সুযোগ রয়েছে।

নতুন উদ্ভাবিত এই অ্যাপ নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরে রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের জ্বালানি দেশে এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এটি পৌঁছানোর পর প্রথম ইউনিটের প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হবে। আশা করছি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন।

রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতায় পরমাণু শক্তি কমিশন বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের জেনারেল ডিজাইনার ও কন্ট্রাক্টর রাশিয়ার রসাটম করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা।

গত ৫ মে রাশিয়ায় এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রথম ব্যাচের পারমাণবিক জ্বালানি (ইউরেনিয়াম) উৎপাদন প্রস্তুতি সনদসংক্রান্ত চুক্তি সই হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আগামী অক্টোবরে দেশে জ্বালানি এসে পৌঁছানোর কথা থাকলেও তার আগেই এটি আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ইউরেনিয়াম আমদানি এটা দেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় মাইলফলক। পারমাণবিক এই জ্বালানি আমদানি ও সংরক্ষণ সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক নিউক্লিয়ার ক্লাবে যুক্ত হবে। এ মর্যাদা পাওয়ার পাশাপাশি বিশ্বের দরবারে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবেও পরিচিতি লাভ করবে। সেই সঙ্গে বিক্রয়কেন্দ্রটিতে উৎপাদন শুরু করতে আর কোনো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জও থাকবে না।

বাংলাদেশের একক প্রকল্প হিসেবে সবচেয়ে বড় অবকাঠামো এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের দুটি ইউনিটে থাকছে ৩+ প্রজন্মের রুশ ভিভিইআর রিয়্যাক্টর, যেগুলো সব আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা চাহিদা পূরণে সক্ষম। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বর্তমানে বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট থেকে ২০২৪ সালে এবং এর পরের বছর দ্বিতীয় ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট করে মোট ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিড যোগ হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মানাধীন এই প্রকল্পে রাশিয়া ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেবে এবং বাংলাদেশ সরকার দেবে ২২ হাজার ৫২ কোটি ৯১ লাখ ২৭ হাজার টাকা।

পাবনায় পদ্মা নদীর পাড়ে ঈশ্বরদীর রূপপুরে ২০১৭ সালের নভেম্বরে দেশের প্রথম এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মূল নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।