সুপারসাইক্লোনে পরিণত হয়েছে ঘূর্ণিঝড় মোখা

ঘূর্ণিঝড় মোখা পরিণত হয়েছে সুপারসাইক্লোনে। শনিবার দিবাগত রাত ৯টার দিকে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়টি সুপারসাইক্লোনে রূপ নিয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার জানিয়েছে। এক ফেসবুক পোস্টে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে রাতে আরেক ফেসবুকে পোস্টে মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, পূর্ব বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় মোখা বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় সুপারসাইক্লোনে পরিণত হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টায় ঘূর্ণিঝড় মোখার গতিবেগ পাওয়া গেছে ঘণ্টায় ২৪০ কিলোমিটার; দমকা হাওয়ার গতিবেগ ঘণ্টায় ২৯৬ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়টির চলার গতিবেগ গত দুদিনের গতিবেগ অপেক্ষা দ্বিগুণ হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টায় ঘূর্ণিঝড়ের চলার গতিবেগ পাওয়া গেছে ঘণ্টায় ২২ কিলোমিটার। ঠিক এ কারণেই ‍ঘূর্ণিঝড়টি এত দ্রুত বাংলাদেশের উপকূলে চলে এসেছে ও রাত ৩টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশ সেন্টমার্টিন দ্বীপে আঘাত করার প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

২০০৭ সালে বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় সিডর। তাতে অন্তত সাড়ে ৩ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন। তারপর আরও অনেক ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের মানুষ দেখলেও তত ক্ষতি আর হয়নি।

এই ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মো. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, এটি (মোখা) সিডরের মতোই শক্তিশালী। প্রায় সিডরের সমতুল্য গতিবেগ নিয়ে সে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। তবে পার্থক্য হলো সিডর বাংলাদেশের মাঝ বরাবর দিয়ে গিয়েছিল, মোখা পাশ দিয়ে যাচ্ছে।

শনিবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি বর্তমানে ঘণ্টায় প্রায় ২২ কিলোমিটার বেগে এগিয়ে আসছে।’

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টি শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।

জয়েন্ট তাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের গ্রাফ ও তথ্য বলছে, রোববার প্রথম প্রহরেই মোখার অগ্রভাগ উপকূলের কাছে পৌঁছে যাবে। সে সময় ঝড়ের ধাক্কা শুরু হবে, প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর পুরো ঝড় উপকূলে উঠে না যাওয়া পর্যন্ত চলবে। উপকূলে আঘাত হানার ঠিক আগেও বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টায়ও ঝড়ে বাতাসের তীব্রতা থাকবে ২১২ কিলোমিটারের বেশি।

ভারতের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, রোববার দুপুরে মিয়ানমারের কাইয়ুউ এবং বাংলাদেশের কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানবে ঘূর্ণিঝড়টি। শনিবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত আগের ৬ ঘণ্টায় ঘূর্ণিঝড়টি ঘণ্টায় ১৯ কিলোমিটার গতিতে এগিয়েছিল। এর আগে মোখার গতি ছিল এর অর্ধেকে; স্থলভাগের যত কাছাকাছি হবে, এর গতি তত বাড়বে বলে আগেই আভাস দিয়ে আসছিলেন আবহাওয়াবিদরা।

ভারতের আবহাওয়া বিভাগ মোখাকে ‘চরম প্রবল ঘূর্ণিঝড়’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তবে উপকূলে আঘাত হানার সময় এর তীব্রতা কিছুটা কমে যাবে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে। দেশটির আবহাওয়া বুলেটিন অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টি রোববার উপকূলে আঘাত হানার সময় এর কেন্দ্রে বাতাসের একটানা গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১৭০-১৮০ কিলোমিটার, যা দমকা হাওয়ার আকারে ২০০ কিলোমিটারে উঠতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছবে সাগরে থাকা অবস্থায় শনিবার রাতের আগেই। তখন এর কেন্দ্রে বাতাসের একটানা গতিবেগ ২০০ থেকে ২১০ কিলোমিটার হবে, যা দমকা হাওয়ার আকারে ২৩০ কিলোমিটারে উঠতে পারে।

এদিকে ঝড়ের প্রভাবে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, বান্দরবান, খুলনা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, পটুয়াখালী ও ভোলা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপ প্রবাহও প্রশমিত হতে পারে।

Scroll to Top