মার্কিন বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর আলাদা অঞ্চলের প্রস্তাব

শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের জন্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন। ওয়াশিংটনে ইউএস চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত সভায় তিনি বাংলাদেশের জ্বালানি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইল, আইসিটি ও ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে বিনিয়োগের জন্য ব্যবসায়ীদের আহবান জানান।

‘ইউএস-বাংলাদেশ ইকোনমিক পার্টনারশিপ: শেয়ার্ড ভিশন ফর স্মার্ট গ্রোথ’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের এক্সিকিউটিভ বিজনেস গোলটেবিলের মূল বক্তব্য উপস্থাপনের সময় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় বাংলাদেশে ব্যাপক বিনিয়োগে মার্কিন ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি তিনি আহবানও জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি আপনাদেরকে আমাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস, হালকা ও ভারী যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক সার, আইসিটি, সামুদ্রিক সম্পদ এবং চিকিৎসা সরঞ্জামসহ অনেক গতিশীল ও সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে বিনিয়োগ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।

আমি আপনাদেরকে আমাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস, রাসায়নিক সার, আইসিটি, সামুদ্রিক সম্পদসহ অনেক সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে বিনিয়োগ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ইউএস বাংলাদেশ আইটি কানেক্ট পোর্টাল উদ্বোধন করেন। ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল ইউএস চেম্বার অব কমার্স ওয়াশিংটন ডিসির গ্রেট হলে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল আমাদের দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

এ সময় বাংলাদেশের উদার বিনিয়োগ নীতির কথা স্মরণ করিয়ে বিনিয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করা ও বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের আশ্বাসও দেন তিনি।

সরকার প্রধান বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ২৯টি হাই-টেক পার্ক রয়েছে। বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ সুরক্ষা, ট্যাক্স হলিডে, রয়্যালটি রেমিটেন্স, বাধাহীন প্রস্থান নীতি, লভ্যাংশ ও মূলধন সম্পূর্ণ প্রত্যাবর্তন সুবিধা রয়েছে। আমরা আমাদের বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি।

অনুষ্ঠানে তিনি আরো বলেন, কয়েক বছরের মধ্যেই ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হবে বাংলাদেশের। আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নীতিগুলো অনেক ক্ষেত্রেই এদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশীদের থেকে এগিয়ে। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় প্রতিবেশীর তুলনায়ও বেশি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে আমাদের একক বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য ও বিদেশী বিনিয়োগের বৃহত্তম উৎস। ২০২১-২০২২ সালে বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১০.৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে এবং ২.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে।

তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের যাত্রায় অংশীদার হিসেবে আমাদের সাথে থাকার জন্য আমি আজকে এখানে আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি। বাংলাদেশ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ২৯টি হাই-টেক পার্ক স্থাপন করছে।

তিনি আশ্বাস ব্যক্ত করে বলেন যে, আমরা আমাদের বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ জলবায়ু উন্নয়ন কর্মসূচি’ বাস্তবায়ন করছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশীদার হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে আমাদের একক বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য, বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের বৃহত্তম উৎস, দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন অংশীদার এবং প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

প্রধানমন্ত্রী এ অঞ্চলে বাংলাদেশের সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ নীতির কথা আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে আইন দ্বারা বিদেশি বিনিয়োগ সুরক্ষা, ট্যাক্স হলিডে, রয়্যালটি রেমিটেন্স, বাধাহীন প্রস্থান নীতি, লভ্যাংশ ও মূলধন সম্পূর্ণ প্রত্যাবর্তন সুবিধা রয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য হলো আমাদের জনগণের জন্য পারস্পরিক সুবিধা ও সমৃদ্ধি অর্জন করা। আমাদের ক্রমবর্ধমান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের মধ্যে সম্পর্কের তা প্রতিফলিত হচ্ছে। ২০২১-২০২২ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ১০.৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে এবং ২.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে।

উপকূলীয় অঞ্চলে বাংলাদেশে একটি শিল্প কেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাপানের প্রস্তাবের উদাহরণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাই আমাদের লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রসহ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নীত করা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের প্রচেষ্টায় গত ১৪ বছরে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য আর্থ-সামাজিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বাংলাদেশ এখন সর্বজনীনভাবে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে স্বীকৃত।

তিনি বলেন, সুশাসনের ধারাবাহিকতা, আইনের শাসন ও স্থিতিশীলতা, গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগ, নারীর ক্ষমতায়ন এবং আইসিটি খাতে অগ্রগতির কারণে এটা সম্ভব হয়েছে যা আমাদেরকে ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জনের পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে। আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা।

প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক এবং চেয়ারম্যান এক্সেলরেট এনার্জি স্টিভেন কোবোস, বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের গ্লোবাল চেয়ার ইমেরিটাস (বিসিজি) হ্যান্স-পল বার্কনার, মাস্টারকার্ডের গ্লোবাল পাবলিক পলিসি অ্যান্ড ইন্দো-প্যাসিফিক পলিসি অপারেশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রবি অরোরা, বিকাশের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদির, শেভরন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর এরিক ওয়াকার এবং গ্লোবাল হেড অব এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড নিউজ এক্সনমোবিলের ভেঞ্চার ড. জন আর্ডিল গোলটেবিলে বক্তৃতা করেন।

ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট এবং ইউএস চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট-সাউথ এশিয়া অ্যাম্বাসেডর অতুল কেশপ স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, বোয়িং ইন্ডিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট শাইল গুপ্ত, ইউএস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান কেভিন রোপেকে, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।