আজ শেরেবাংলা ফজলুল হকের ৬১তম মৃত্যুবার্ষিকী

আজ বৃহস্পতিবার ২৭ এপ্রিল অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, বাংলার কৃষক ও মেহনতী মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু শেরেবাংলা আবুল কাশেম (এ কে) ফজলুল হকের ৬১তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৬২ সালের এই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। জাতীয় এই নেতার মৃত্যুবার্ষিকীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।

১৮৭৩ সালে ২৬ অক্টোবর ঝালকাঠি জেলার রাজাপুরের সাতুরিয়া গ্রামের মিঞা বাড়িতে এ কে ফজলুল হক জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষের নিকট শেরেবাংলা (বাংলার বাঘ) এবং ‘হক সাহেব’ নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন উপমহাদেশের অন্যতম এক প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবিদ।

শেরেবাংলা কলকাতার মেয়র (১৯৩৫), অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী (১৯৩৭-১৯৪৩), পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী (১৯৫৪), পূর্ব বাংলার গভর্নরের (১৯৫৬-১৯৫৮) পদসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। যুক্তফ্রন্ট গঠনে প্রধান নেতাদের মধ্যে অন্যতম এবং ২১ দফা দাবির প্রণেতা ছিলেন তিনি। এ ছাড়া ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অবদান রাখার পাশাপাশি ১৯৪০ সালে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন শেরেবাংলা।

এ কে ফজলুল হকের মৃত্যুবার্ষিকীতে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, ‘শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা আগামী প্রজন্মের জন্য অনুসরণীয় হয়ে থাকবে।’

শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হককে উপমহাদেশের এক অনন্য সাধারণ প্রজ্ঞাবান ও বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘তিনি ছিলেন অসাধারণ মেধাবী ও বাগ্মী। তিনি একাধারে বাংলা, ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় অনর্গল বক্তৃতা করতে পারতেন। দক্ষ রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক হিসেবে প্রায় অর্ধ-শতাব্দীর অধিককাল তিনি গণমানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন।’

তিনি বলেন, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ছিলেন গণমানুষের নেতা। তিনি কৃষক ও শ্রমিকদের স্বার্থে ১৯৩৬ সালে কৃষক প্রজা পার্টি (কেপিপি) এবং ১৯৫৩ সালে শ্রমিক-কৃষক দল প্রতিষ্ঠা করেন। অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শেরে বাংলা এ অঞ্চলের মানুষের শিক্ষা, রাজনীতি, সমাজ সংস্কারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, এ কে ফজলুল হক এদেশের কৃষক সমাজের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করতে আজীবন কাজ করেছেন। কৃষকদের অধিকার আদায়ে তিনি সব সময় সোচ্চার ছিলেন। তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে দরিদ্র কৃষক এবং প্রজাদের স্বার্থ রক্ষায় কৃষি ঋণ আইন এবং প্রজাস্বত্ব (সংশোধনী) আইনসহ বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করেন। জমিদাররা রায়তদের উপর যে আবওয়াব ও সেলামি ধার্য করতেন, তিনি তা বিলোপ সাধন করেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শিক ঐক্য ও রাজনৈতিক ঘনিষ্টতা ছিল। ফজলুল হকের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেরে বাংলার মৃত্যুবার্ষিকীতে বিভিন্ন সংগঠন আলোচনা, মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, দোয়া ও বিশেষ মোনাজাতের কর্মসূচি নিয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় মরহুমের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাতের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শেরে বাংলা জাতীয় স্মৃতি সংসদ ও বরিশাল বিভাগ সমিতিসহ আরও কয়েকটি সংগঠন প্রতি বছর আলোচনা সভার আয়োজন করে।