বঙ্গবাজারে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে সিগারেট বা কয়েলের আগুন থেকে তদন্ত কমিটির-এমন ধারণা। গত ৪ এপ্রিল সকালে বঙ্গবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এমন ধারণা করা হয়েছে গঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে।
আর ওই আগুনে মার্কেটের অবকাঠামো ও মালামাল পুড়ে ক্ষতি হয়েছে ৩০৩ কোটি ৫ লাখ টাকা।
আজ মঙ্গলবার বিকালে ঢাদসিকের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের নিকট প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি।
তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বঙ্গবাজারের আগুনের ঘটনায় অবকাঠামোগত ও মালামাল পুড়ে যে ক্ষতি হয়েছে তার হিসাব করা হয়েছে।
তবে তারা বলেছে পাশাপাশি মানবিক, মানসিক বিপর্যয় ও প্রায় ৪ হাজার দোকানের সঙ্গে সম্পৃক্ত মালিক ও কর্মচারীদের ক্ষতির পরিমাণ, চাকরি হারানো, অনেকের পরিবার পরিচালনার অসহায়তার আর্থিক মাপকাঠি নিরূপণ দূরহ।
তদন্ত প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায়, পাঁচ মার্কেটের অবকাঠামো পুড়ে ক্ষতি হয়েছে ১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এরমধ্যে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স মার্কেটের ২ হাজার ৯৬১টি দোকানের অবকাঠামো নষ্ট হয়ে ক্ষতি হয়েছে ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকা, এনেক্স মার্কেটের ১ কোটি, মহানগর মার্কেটের ৭৯১টি দোকান পুড়ে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেটের ৫৯টি দোকান পুড়ে ৩০ লাখ, বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্সের ৩৪টি দোকান পুড়ে প্রায় ২০ লাখ টাকার অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে। আর মালামাল পুড়ে ক্ষতি হয়েছে ২৮৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
এর মধ্যে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ীদের দোকানের মালামাল পুড়ে ক্ষতি হয়েছে ২২২ কোপি ৭ লাখ টাকা। এখানে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে দোকানের আয়তন ও মালামালের ধরণ বিবেচনা করে। বঙ্গবাজারের প্রতিটি দোকানের আয়তন ছিল ১৭ দশমিক ৫ বর্গফুট থেকে ২০ বর্গফুট। এসব দোকানে গেঞ্জির কাপড়, প্যান্ট ও গার্মেন্টস সামগ্রীর দোকান ছিল। ওইসব দোকানে ৪ থেকে ১৫ লাখ টাকার পর্যন্ত মালামাল ছিল।
মহানগর শপিং কমপ্লেক্সের মালামাল পুড়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫৯ কোটি ৩ লাখ টাকা, বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেট ও বঙ্গ হোমিও মার্কেটের আর্থিক ক্ষতি ৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এসব মার্কেটের দোকানপ্রতি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
তদন্ত কমিটির সুপারিশ: তদন্ত প্রতিবেদনে এসব মার্কেটের অগ্নিপ্রতিরোধে ১০টি সুপারিশ করেছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, ১. ঢাদসিক এলাকায় কাঠ বা টিনের মার্কেট থাকা উচিত নয়, থাকলে দ্রুততম সময়ে পাকা করার ব্যবস্থা করতে হবে ২. সব মার্কেটে পর্যাপ্ত ফায়ার এস্টিংগুইশারসহ পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা করা এবং কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা ৩. নিয়মিত অগ্নিনির্বাপণের দায়িত্বপ্রাপ্তদের মাধ্যমে পরিদর্শন করে সনদ মার্কেটে টাঙানোর ব্যবস্থা করা ৪. মার্কেটের আন্ডারগ্রাউন্ডে ওয়াটার রিজার্ভার রাখতে হবে এবং তা থেকে পাইপের মাধ্যমে চারটি স্থানে ওয়াটার হাইড্রেন্টের ব্যবস্থা করতে হবে ৫. মার্কেটে চলাচলের পথ প্রশস্ত রাখতে হবে ৬. বৈদ্যুতিক সংযোগ, ভোল্ট ক্যাপাসিটি ও ব্যবহারের মধ্যে সামঞ্জস্য সঠিক কিনা তা যাচাই করা ৭. খাবারের দোকান, রেস্টুরেন্ট, মসজিদ ও থাকার জায়গা মার্কেটের একপাশে ব্যবস্থা করা ৮. মার্কেটে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কর্মী, বিদ্যুৎ কর্মী থাকা ও দায়িত্বশীল ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে, ৯. বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তার ব্যবহার এবং ১০. পর্যাপ্ত জলাশয় সংরক্ষনের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৪ এপ্রিল সকাল ৬টার দিকে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স মার্কেট ও আশপাশের এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড হয়। চৈত্রের খরতাপ ও বাতাসের প্রবাহ বেশি থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ আগুনে প্রাণহানি না ঘটলেও ঢাদসিকের মালিকানাধীন টিন, কাঠ ও লোহার কাঠামোয় তৈরি বঙ্গবাজারের ৪টি মার্কেট (১. বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেট, ২. গুলিস্তান হকার্স মার্কেট, ৩. মহানগর হকার্স মার্কেট এবং ৪. আদর্শ হকার্স মার্কেট) ও মহানগর শপিং কমপ্লেক্স আগুনে পুড়ে যায়।
সাততলা বিশিষ্ট এনেক্সকো টাওয়ারের দোকানসমূহ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাশাপাশি সড়কের পশ্চিম পাশের বঙ্গ ইসলামিয়া সুপার মার্কেট ও বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্সও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বঙ্গবাজারের আগুনের ঘটনায় ঢাদসিকের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রধান করে ৮ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
এ কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন-সংশ্লিষ্ট এলাকার সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিল। অন্য সদস্যদের মধ্যে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি এবং ঢাদসিকের ৪ জন সদস্য। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত দোকান সংখ্যা ৩ হাজার ৮৪৫টি।
বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত দোকানের মধ্যে রয়েছে, বঙ্গ ইউনিটে ৮৬৩টি, গুলিস্তান ইউনিটে ৮২৮টি, মহানগরী ইউনিটে ৫৯৯টি, আদর্শ ইউনিটে ৬৭১টি, বেসরকারি মালিকানাধীন মহানগর শপিং কমপ্লেক্সে ৭৯১টি, বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেটের ৫৯টি, বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্সে ৩৪টি। এনেক্স টাওয়ারের বেশির ভাগ দোকান বিমার আওতায় রয়েছে। এ জন্য ওই মার্কেটের দোকান ও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হয়নি।