আজ শনিবার (১৮ মার্চ) ভারত থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পরিশোধিত জ্বালানি তেল ডিজেল আমদানি শুরু হচ্ছে। এদিন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনটি উদ্বোধন করবেন। গতকাল শুক্রবার (১৭ মার্চ) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শনিবার (১৮ মার্চ) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে \’ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন\’ উদ্বোধন করবেন।
আন্তর্জাতিক দরে এই তেল আমদানি করা হলেও বর্তমানে প্রিমিয়াম (পরিবহন, বিমা ও বাষ্পজনিত ক্ষয়) বাবদ খরচের অর্থ সাশ্রয় হবে। দীর্ঘ মেয়াদেও অর্থসাশ্রয়ের আশা দেখছে সরকার। এদিকে রাশিয়া থেকে বিশ্বদরের চেয়ে কম দামে তেল কেনা বাড়িয়ে তা থেকে আন্তর্জাতিক দরে বাংলাদেশে বিক্রি করার মাধ্যমে ভারতও লাভবান হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০১২ সালের ৬ ডিসেম্বর পাইপলাইনে তেল আমদানি করতে ভারতের কাছ থেকে প্রস্তাব পায় বাংলাদেশ। বর্তমানে ক্রুড ও পরিশোধিত তেল সামুদ্রিক জাহাজ, নৌজাহাজ, ওয়াগন ট্রেন এবং ট্যাংক লরিতে পরিবহন করা হচ্ছে। দীর্ঘকাল ধরে এ চার উপায়ে বিদেশ থেকে আমদানি থেকে শুরু করে প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু এতে সিস্টেম ও খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়তে থাকার যুক্তি এনে তেল পরিবহনে পাইপলাইন ব্যবহারের পরিকল্পনা করে সরকার। এরই অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বরে ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন’ নির্মাণে ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করা হয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এটি চালু করার লক্ষ্য থাকলেও তা সম্ভব হয়নি।
১৩১ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইনটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে বাংলাদেশের দিনাজপুরের পার্বতীপুর তেল ডিপো পর্যন্ত নির্মাণ গত মাসে সম্পন্ন হয়েছে। ভূমির উপরিভাগের তিন মিটার গভীরে এটি প্রোথিত হয়েছে। পাইপলাইনটির ১২৬ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার বাংলাদেশে এবং ভারত অংশে পাঁচ কিলোমিটার রয়েছে। এটি বাংলাবান্ধা থেকে পার্বতীপুর যাওয়ার পথে তিস্তা, ইছামতি, করতোয়া ও ডাউক নদনদীর ছয়টি পয়েন্টে এবং রেলওয়ের অধীনে তিনটি পয়েন্টে সড়ক ও জনপথের চারটি পয়েন্টে এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ২৮ পয়েন্টে স্পর্শ করেছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) এবং ভারতের নুমালীগড় রিফাইনারি (এনআরএল)। বাংলাদেশ অংশের কাজ বিপিসির অর্থায়নে ও তত্ত্বাবধানে এবং ভারত অংশের কাজ এনআরএলের অর্থায়নে ও তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়। পাইপলাইন নির্মাণের কাজ করেছে ভারতের দীপন গ্যাস। প্রকল্পটিতে বিপিসির খরচ হয়েছে ৩০৬ কোটি ২৩ লাখ ৩২ হাজার টাকা। দুই সংস্থার মধ্যে স্বাক্ষরিত ১৫ বছর মেয়াদি চুক্তির আওতায় প্রথম তিন বছরে বার্ষিক আড়াই লাখ মেট্রিক টন, এর পরের তিন বছর বার্ষিক ৩ লাখ টন, সপ্তম থেকে দশম বছর পর্যন্ত বার্ষিক ৫ লাখ টন এবং ১১ থেকে ১৫তম বছর পর্যন্ত বার্ষিক ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করা হবে।
চলতি মার্চের প্রথম সপ্তাহে ডিপোর একটি মজুতাগারের সঙ্গে পাইপলাইন সংযুক্ত (হুকড আপ) হয়ে গেছে। এ তেল ভারত থেকে বাংলাদেশ অংশের পাইপলাইন দিয়ে ডিপোতে নির্মিত পিগিং পয়েন্ট হয়ে ফিল্টারিং (ছাঁকা) হবে। এরপর তা মিটারিং স্টেশন হয়ে মজুতাগারে সংরক্ষিত হবে। স্ক্যাডা পদ্ধতির এই মিটারের মাধ্যমে তেলের পরিমাণ, তাপমাত্রা এবং মান সম্পর্কে জানা যাবে বলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ জানিয়েছেন।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারদর অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। পাইপলাইনের মাধ্যমে এ তেল আমদানির প্রিমিয়াম বা পরিবহন খরচ প্রতি ব্যারেলে (প্রায় ১৫৯ লিটার) সাড়ে ৫ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১৮ সালে যখন বিপিসি ও এনআরএলের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় তখন বাংলাদেশ প্রতি ব্যারেল তেল আমদানিতে প্রিমিয়াম (পরিবহন ও বাষ্পজনিত ক্ষয়ের খরচ) বাবদ ২ দশমিক ২ ডলার ব্যয় করতো। তবে বর্তমানে প্রিমিয়াম বাবদ খরচ ১০-১২ ডলারে উঠে গেছে। এর ফলে এখন প্রিমিয়ামে অর্থসাশ্রয় হবে। পূর্ণ সক্ষমতায় পাইপলাইনে তেল সরবরাহ হলে বছরে ৮০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
এ প্রসঙ্গে বিপিসির এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে বিদেশ থেকে তেল চট্টগ্রামে আসে। সেটি উত্তরবঙ্গে পাঠাতেও খরচ রয়েছে। পাইপলাইনে তেল আনার মাধ্যমে সে খরচও অনেকখানি কমবে। ভারত নিজেও তেল আমদানিকারক দেশ। তবে ভারত বর্তমানে রাশিয়া থেকে আন্তর্জাতিক বাজারদরের চেয়ে কম দামে তেল কিনছে। কিন্তু বাংলাদেশের কাছে চুক্তি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক দরে তেল বিক্রি করবে। এর ফলে তাদের মুনাফার হার বাড়বে। দুই রাষ্ট্রের মধ্যে এ বেচাকেনা বর্তমানে উভয় পক্ষের জন্যই লাভজনক।