ডলার–সংকটে চরম বিপর্যয়ে ভুগছে বিদ্যুৎ–জ্বালানি খাত

ডলার সংকটে চরম বিপর্যয়ের মুখে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে গ্যাস, কয়লা ও জ্বালানি আমদানি। ফলে গ্যাস, কয়লা ও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন কমে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী গরমে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়বে দেশ। গ্যাস সরবরাহ কম থাকায় ইতোমধ্যে ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের শিল্প খাত।

জ্বালানি–সংকটে শীত মৌসুমেও দিনে এক ঘণ্টা নিয়মিত লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। সামনে গ্রীষ্ম মৌসুম। আগামী মাস থেকে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়তে থাকবে। বিষয়টি মাথায় রেখে আগামী মে মাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এ জন্য কয়লা, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও জ্বালানি তেল আমদানির ডলারের সংস্থানই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিদ্যুৎ খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত কৃষিসেচ মৌসুম। এ সময় দেশে বোরো আবাদ হয়। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত গরমও বেশি। মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান। সব মিলিয়ে তখন বিদ্যুতের চাহিদা থাকবে সর্বোচ্চ। উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি সরবরাহ নিয়ে দুশ্চিন্তায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।

গত বছরের ১৭ এপ্রিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছিল। এবার মে মাসে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াট। উৎপাদন সক্ষমতা আছে ২৪ হাজার ১১৪ মেগাওয়াট। জ্বালানির অভাবে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়নি বলে গত বছরের জুলাই থেকে টানা কয়েক মাস ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং করা হয়েছে।

ডলার–সংকটে কয়লা আমদানি না হওয়ায় রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এক মাস বন্ধ রাখতে হয়েছে। কয়লার বিল বকেয়া রেখে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। পাঁচ মাসের বিল বকেয়া থাকায় জ্বালানি তেল আমদানিতে হিমশিম খাচ্ছে বেসরকারি খাতের তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকেরা। নিয়মিত ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছে না বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এলএনজি আমদানি বাড়াতে পারছে না বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। ডলারের চাহিদা জানিয়ে সব প্রতিষ্ঠান মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিচ্ছে। তাদের পাঁচ মাসে ৬০০ কোটি ডলার (৬৩ হাজার কোটি টাকা, ডলার ১০৫ টাকা ধরে) লাগবে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গণমাধ্যমকে বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সব ধরনের জ্বালানি আমদানিতে মাসে গড়ে অন্তত ১২৫ কোটি ডলার লাগে। বিশ্ববাজারে এলএনজি, কয়লার দাম কিছুটা কমতির দিকে। গ্রীষ্মে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রস্তুতি আছে। ইতিমধ্যে এলএনজি আমদানি বাড়ানো হয়েছে। এখন মূল চ্যালেঞ্জ ডলারের জোগান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, জ্বালানি আমদানিতে খরচ বেশ বেড়েছে। শুধু পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য আমদানিতে গত অর্থবছরের (২০২১-২২) জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৬৭ কোটি ডলার খরচ হয়েছে। চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) একই সময়ে লেগেছে ৫৩৬ কোটি ডলার। অর্থবছরের বাকি ছয় মাসে এ খাতে আমদানি খরচ আরও বাড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ডলার–সংকট পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বাড়ছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি আমদানিতে সংকট হবে না। ব্যাংকগুলোর কাছে ৩০০ কোটি ডলার মজুত রয়েছে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংক সহায়তা দিচ্ছে।