আজ পয়লা ফাল্গুন। শীতের রুক্ষতা-রিক্ততা মুছে প্রকৃতিতে বইছে ফাল্গুনী হাওয়া। বিপুল ঐশ্বর্যের ঋতু-ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। ‘আজি দখিন দুয়ার খোলা/ এসো হে এসো হে এসো হে আমার বসন্ত’—কবিকণ্ঠের এ প্রণতির মাহেন্দ্র লগন এলো। এলো ‘দখিন সমীরণের শিহরণ’ জাগানোর অনুপম দিন। মাতাল হাওয়ায় কুসুম বনের বুকের কাঁপনে, উড়াল মৌমাছিদের ডানায় ডানায়, নিরাভরণ বৃক্ষে কচি কিশলয় জেগে উঠবার আভাসে আর বনতলে কোকিলের কুহুতান জানান দিচ্ছে :‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে…।’
গণমানুষের কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ভাষায় ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক/ আজ বসন্ত…গোলাপের সুবাস আজ না ছড়াক/ কুসুমকলি আজ না হোক জীবন, তবু আজ বসন্ত…।’ এমন মধুর সময়ে প্রকৃতি আর প্রাণের আপন উচ্ছ্বাস উৎসবের রঙঢঙে মদিরায় মেতে ওঠে। ফুল ফুটবার পুলকিত এই দিনে বন-বনান্তে কাননে কাননে পারিজাতের রঙের কোলাহলে ভরে ওঠে চারদিক।
আবহমান বাংলার নৈসর্গিক প্রকৃতিতে এখন সাজসাজ রব। হিমেল পরশে বিবর্ণ প্রকৃতিতে জেগে উঠছে নবীন জীবনের প্রাণোল্লাস। নীল আকাশে সোনা ঝরা আলোকের মতোই হৃদয় আন্দোলিত-আলোড়িত-আপ্লুত। আহা! কি আনন্দ আকাশে বাতাসে…। ঋতুচক্র এখন যেন আর পঞ্জিকার অনুশাসন মানছে না। কুয়াশার চাদরমোড়া শীত তার তীব্রতা ছড়াতে না ছড়াতেই এলো বসন্ত। প্রকৃতির দিকে তাকালে শীত বর্ষার মতো বসন্তকেও সহজে চেনা যায়।
বাঙালি জীবনে বসন্তের আগমন বার্তা নিয়ে আসে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’। ১৯৫২ সালে এমন বসন্তেই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল। বসন্তেই বাঙালি মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিল। তাই কেবল প্রকৃতি আর মনে নয়, বাঙালির জাতীয় ইতিহাসেও বসন্ত আসে এক বিশেষ মাহাত্ম্য নিয়ে। বসন্ত হয়ে ওঠে এক অনন্য উৎসব।