মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু হতে যাচ্ছেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি। তিনি ছিলেন পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছেন। কর্মজীবন শুরু করেন আইনজীবী হিসেবে। বিসিএস (বিচার) ক্যাডারে যোগ দিয়ে বিচারকের বিভিন্ন পদে ২৫ বছর চাকরি শেষে অবসর নেন ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে। দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পাঁচ বছর। সর্বশেষ ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান।
তাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে বেছে নিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের সভাপতির সিদ্ধান্তে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এই মনোনয়ন নিয়ে নিশ্চুপ তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি। কোনো মন্তব্য জানাননি দলটির নেতারা। তবে আনন্দিত হওয়া কথা জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাম দলগুলোর নেতারা।
রাষ্ট্রপতি পদে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর মনোনয়ন সম্পর্কে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংসদীয় দলনেতা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তার দল একজন অসাধারণ ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিয়েছে।’ রবিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন মাঠের রাজনীতি করেছেন। রাজনীতি করতে গিয়ে তিনি ঝুঁকি নিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছেন। যিনি মুক্তিযোদ্ধা, যার মধ্যে ভদ্রতা, নম্রতা একই সাথে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা—সবকিছুরই সমন্বয় আছে।’
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে চায়নি বিএনপি। গতকাল রবিবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এই সরকার কী করছে না করছে এসব বিষয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
তবে এই মনোনয়নে খুশি হয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে মনোনয়ন দিয়েছে। তাতে আমি আনন্দিত। তিনি ন্যায়পরায়ণ। নিষ্ঠাবান ব্যক্তি। আমার শুভেচ্ছা থাকল তার জন্য।’ অন্যদের প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেসব দল প্রশ্ন তুলছে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে, তারা কি সংবিধান দেখেনি? সংবিধানেই তো বলা আছে, সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া দলটি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে পারে। আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে সংসদে। তারা সাংবিধানিকভাবেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে পারে।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবির সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান খান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি পদে যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন, আশা করি তিনি খারাপ হবেন না। তাছাড়া রাষ্ট্রপতি পদে তো অত বেশি দায়িত্বও থাকে না। আমি আশা করছি, তিনি (সাহাবুদ্দিন চুপ্পু) ভালো করবেন।’ তবে এ প্রসঙ্গে সিপিবির আরেক সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। তবে তারা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সমস্ত ভার অর্পণ করেছে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর। প্রধানমন্ত্রী যাকে নির্বাচন করেছেন, তাকে (সাহাবুদ্দিন চুপ্পু) আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তিনি ভালো করবেন। আমি তাকে অভিনন্দন জানাই।’
বাসদের সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ অবশ্য ভিন্ন কথা বলছেন। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপ্রধান দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। সেখানে কাকে রাষ্ট্রপতি পদে আসীন করা হচ্ছে তা দেশের মানুষের কাছে স্পষ্ট করার দরকার ছিল। সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করতে পারত আওয়ামী লীগ। সেটি কিন্তু তারা করেনি। তারা গণতন্ত্রের কথা বলে এমন একটি অগণতান্ত্রিক আচরণ করল। রাষ্ট্রপতি পদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে আসীন করতে যাচ্ছেন, তিনি আমলা হিসেবে কেমন পারফর্ম করেছেন, দুদকের কমিশনার থাকাকালীন দুর্নীতি দমনে কতটা সফল হয়েছেন, সেসব জনগণের কাছে পরিষ্কার করা দরকার ছিল। যাই হোক, এখন কে রাষ্ট্রপতি হবেন এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো মাথাব্যথা নেই।’
তবে কঠোর সমালোচনা করেছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি পদে দলের অভিজ্ঞ ও পোড় খাওয়া কাউকে মনোনীত করতে না পারা ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের প্রমাণ। ঐতিহ্যবাহী বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ তাদের নিজেদের মধ্য থেকেও কোনো অভিজ্ঞ, গ্রহণযোগ্য ও পোড় খাওয়া রাজনীতিককে মনোনীত করতে পারল না।’ নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-এমপিদেরও রাষ্ট্রপতি পদের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে মতামত বা ভূমিকা রাখার অবকাশ নেই। প্রধানমন্ত্রীর একক সিদ্ধান্তেই যদি রাষ্ট্রপতি মনোনীত হন তাহলে সরকার বা ক্ষমতাসীন দলে আর গণতন্ত্রের সুযোগ কোথায়?’
দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে মনোনয়ন দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনাকে এই একক ক্ষমতা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গতকাল রবিবার সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর মনোনয়নপত্র জমা দেয় ক্ষমতাসীন দলটি। নিতান্তই ব্যতিক্রমী কিছু না হলে তিনি হতে যাচ্ছেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি।