অনুষ্ঠিত হল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন-২০২৩

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসকে স্মরণীয় করে রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন-২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) তৃতীয়বারের মতো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়। এবারের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন এর মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে বাঙালি জাতিসত্ত্বা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বর্হিবিশ্বের সামনে উপস্থাপন এবং যুবসমাজকে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনধারায় উদ্বুদ্ধ করা।

অনুষ্ঠিত ম্যারাথনের প্রধান পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধান উপদেষ্টা সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

ভোর সাড়ে ৫ টায় ম্যারাথনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘জাতীর জনকের নামে এমন একটি আয়োজন আমাদের জন্য গর্বের। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এমন একটি আয়োজন সুশৃঙ্খল এবং সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমি আয়োজকদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

ম্যারাথন শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথনের প্রধান উপদেষ্টা সেনাবাহিনী প্রধান, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। এসময় ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাগণ, এ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের কর্মকর্তাগণ, বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন স্পন্সরবৃন্দ, গণমাধ্যম ব্যক্তিবর্গ এবং ম্যারাথনে অংশগ্রহণকারী দৌঁড়বিদগণ উপস্থিত ছিলেন।

ম্যারাথন কমিটির প্রধান উপদেষ্টা সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ সমাপনী বক্তব্যের শুরুতেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। একইসঙ্গে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন-২০২৩ আয়োজন এবং দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন-২০২৩ বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনসাধারণের মাঝে সামাজিক এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টি করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এসময় তিনি প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের স্মরণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন আয়োজনের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পরিশেষে তিনি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন-২০২৩ এ অংশগ্রহণকারী সকল দেশি এবং বিদেশি অংশগ্রহণকারী অ্যাথলেটবৃন্দ এবং এই আয়োজনকে সাফল্যমন্ডিত করার পেছনে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

ম্যারাথন-২০২৩ বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার হতে শুরু হয়ে ৩০০ ফিট রাস্তা দিয়ে কাঞ্চন ব্রিজ এর পূর্ব পর্যন্ত অতিক্রম করে এবং একই রাস্তায় ফেরত এসে বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে শেষ হয়। ফুল ম্যারাথনে এলিট দৌঁড়বিদদের মধ্যে পুরুষ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হন কেনিয়ার স্ট্যানলি কিপ্রোটিস বেট এবং মহিলা বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হন ইথিওপিয়ার বাসাঙ্কি ইমোসি বিলো।

ফুল ম্যারাথনে সাফ দৌঁড়বিদদের মধ্যে পুরুষ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হন ভারতের বাঙ্গরিয়া ভিক্রম বারাতসিন এবং মহিলা বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হন নেপালের পুস্পা ভান্ডারি। এছাড়া হাফ ম্যারাথনে এলিট দৌঁড়বিদদের মধ্যে পুরুষ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হন মরক্কোর আব্দিল আজিজ বাঘাজি এবং মহিলা বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হন উগান্ডার রিস্পা চিরোপ।

হাফ ম্যারাথনে সাফ দৌঁড়বিদদের মধ্যে পুরুষ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হন ভারতের অভিষেক পাল এবং মহিলা বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হন ভারতের রেশমা দত্ত কিভেত। ফুল ম্যারাথনে বাংলাদেশি দৌঁড়বিদদের মধ্যে পুরুষ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হন মোঃ আল আমিন এবং মহিলা বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হন পাপিয়া খাতুন। হাফ ম্যারাথনে বাংলাদেশি দৌঁড়বিদদের মধ্যে পুরুষ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হন এম এলাহি সরদার এবং মহিলা বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হন সুস্মিতা ঘোষ।

সুস্মিতা ঘোষ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জাতীর জনকের নামে এই ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেই অনেক ভালো লাগে। গতবার আমি চতুর্থ স্থান অর্জন করেছিলাম। এবার প্রথম হয়ে ভালো লাগছে। আরো ভালো লাগছে আমি একজন সৈনিক হয়ে সেনা প্রধান মহাদয়ের কাছ থেকে পুরস্কার নেব এই জন্য।’

ফুল ম্যারাথনে অংশ নেওয়া ৭১ বছর বয়সী দৌঁড়বিদ, সোয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. খবির উদ্দিন খান বলেন, ‘৭১ বছর বয়সেও আমি দেশে বিদেশে দৌঁড়াচ্ছি। আজকে চার ঘন্টা ৩২ মিনিট দৌড়ালাম। এটি সম্ভব হয়েছে একমাত্র অনুশিলনের কারণে। সবাইকে দৌঁড়ের অনুশীলন করতে হবে। আমি কোনো ধরণের মরণব্যাধিতে আক্রান্ত নই একমাত্র দৌঁড় অনুশীলনের কারণে। তাই সবাইকে দৌঁড় দিতে হবে এবং কোনো রকম বেশি খাওয়া যাবে না, পেট কমাতে হবে। মনে রাখতে হবে দৌঁড়ের উপর কোনো ব্যায়াম নেই।’

ফুল ম্যারাথন এবং হাফ ম্যারাথনে সর্বমোট ২১৬৩ জন দৌঁড়বিদ অংশগ্রহণ করেন। ম্যারাথনে অংশগ্রহণকারী এলিট দৌঁড়বিদদের মধ্যে ফুল এবং হাফ ম্যারাথনে ২১ জন পুরুষ এবং ১৭ জন মহিলা অংশগ্রহণ করেন।

এছাড়া সাফ দৌঁড়বিদদের মধ্যে ফুল এবং হাফ ম্যারাথনে ২৩ জন পুরুষ এবং ২০ জন মহিলা অংশগ্রহণ করেন। এ ম্যারাথনে কেনিয়া, ইথিওপিয়া, মরক্কো, ইউক্রেন, রুয়ান্ডা, লিথুনিয়া এবং উগান্ডা থেকে ৩৮ জন এলিট দোঁড়বিদ এবং ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল ও মালদ্বীপ থেকে ৪৩ জন সাফ দৌঁড়বিদ অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া বাংলাদেশ হতে ফুল ম্যারাথনে ৫৩২ জন এবং হাফ ম্যারাথনে ১৫৫০ জন দৌঁড়বিদ অংশগ্রহণ করেন। তাছাড়া এই ম্যারাথনে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন, জাপান, নেদারল্যান্ডস এবং নরওয়ে’র দৌঁড়বিদরাও অংশগ্রহণ করেন।