প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজের রক্ত দিয়ে বাঙালি জাতির ভালোবাসার ঋণ শোধ করেছিলেন। এখন তার রক্তের ঋণ শোধ করার পালা। দেশের মানুষকে উন্নত জীবন দিতে পারলেই সেই রক্তের ঋণ শোধ হবে।
প্রধানমন্ত্রী আজ মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে জাতীয় সংসদে আনা সাধারণ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ১৪৭ বিধিতে প্রস্তাবটি আনেন। আলোচনা শেষে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়তে। সেটা তাকে করতে দেওয়া হয়নি। তিনি নিজের জীবনে কিছু চাননি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১০ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বলেছিলেন, ‘রক্ত দিয়ে হলেও বাঙালি জাতির এই ভালোবাসার ঋণ শোধ করে যাব।’ তিনি রক্ত দিয়েই ঋণ শোধ করে গেছেন। এখন আমাদের পালা তার রক্তের ঋণ শোধ করার। সেটা করতে পারব কখন? দেশের প্রতিটি গৃহহীন গৃহ পাবে, অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে বাংলাদেশের মানুষকে যখন উন্নত জীবন দিতে পারব, সমৃদ্ধশালী করতে পারব, তখনই সেই রক্তের ঋণ আমরা শোধ দিতে পারব।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়াই হবে জাতির পিতার রক্তের ঋণ শোধ করা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির পিতা বলে গেছেন এই স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস কেউ মুছতে পারবে না। চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না। জয় বাংলা বলে আমরা এগিয়ে যাব।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষের মুক্তি চেয়েছিলেন। বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছিলেন। ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে দেশকে গড়ে তুলেছিলেন। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন এনেছিলেন। সাধারণ স্কুল শিক্ষকও ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। মানুষের ভোটের অধিকার মানুষের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। সংবিধান মোতাবেক ১৯৭৩ সালেই নির্বাচন দেন। বিপ্লব বা যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হওয়ার পর এত অল্প সময়ের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন দেওয়ার ইতিহাস বিশ্বের আর কোনো দেশে নেই।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশের প্রবৃদ্ধি ৯ ভাগের উপরে তুলেছিলেন। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রবৃদ্ধি ৮ ভাগ পর্যন্ত পৌঁছেছিল। আওয়ামী লীগ যে কথা দেয়, সেটা রাখে। জাতির পিতা স্বাধীনতা দেবেন বলেছিলেন সেটা দিয়ে গেছেন। স্বল্পোন্নত দেশে রেখে গিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরে এই দেশের মানুষের কিছুটা হলেও অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য এসেছে। মানুষ অন্তত দুই বেলা পেট ভরে খেতে পারছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞা না থাকলে দেশের প্রবৃদ্ধি আট ভাগ থেকে আরও এগিয়ে নেওয়া যেত উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, যুদ্ধ ও অতিমারি কারোনার কারণে আমাদের খুব কঠিন অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। যেখানে উন্নত দেশ নিজেদের অর্থনৈতিক মন্দার দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে, আমরা সেখানে অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে সক্ষম হচ্ছি।
অন্যদের মধ্যে সরকারি দলের সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোশাররফ হোসেন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, কামরুল ইসলাম, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাসদের হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, আবু হোসেন বাবলা প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।