বিদেশিদের বাংলাদেশ সম্পর্কে জ্ঞান খুব সীমিত: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের মন্তব্যকে সংবাদমাধ্যমে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন মনে করছেন। তিনি বলেন, ‘এ দেশের সাংবাদিকরা যেকোনো বিষয়েই তাদের কাছে ছুটে যান। বাংলাদেশ সম্পর্কে বিদেশিদের জ্ঞান খুব সীমিত, তারা আমাদের মাঝেমধ্যে যে সুপারিশ দেয়, সেগুলো খুব আহাম্মকের মতো মনে হয়।’

গতকাল বুধবার সকালে সিলেটের ইপিআই ভবনে সিভিল সার্জনের কার্যালয় আয়োজিত কমিউনিটি ক্লিনিক বিষয়ক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদেশিদের নিজেদের চেহারা আয়নায় দেখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এই দেশ পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম দেশ, যেখানে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য ৩০ লাখ লোক রক্ত দিয়েছে। গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, মানবাধিকারের জন্য এত লোক পৃথিবীর আর কোথাও রক্ত দেয়নি। এখানে প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে গণতন্ত্র রয়েছে। অথচ তারা আসছে আমাদের মানবাধিকার আর গণতন্ত্র বোঝাতে।’

এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘এ দেশে নির্বাচনে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ লোক ভোট দেয়। অনেক দেশে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ লোকও ভোট দেয় না। সেসব দেশে নির্বাচনে প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যায় না, অথচ এ দেশে একেকটি পদে বিপুল সংখ্যক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এরপরও তারা কী বড় বড় বকবক করে! নিজের দিকে তাকায় না কেন?’

ড. মোমেন বিদেশিদের নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে হইচই না করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘মিডিয়ার কারণে বিদেশিরা পাত্তা পাচ্ছে। আপনারা বিদেশিদের কাভার করা বন্ধ করেন। আপনারা কাভারেজ বন্ধ করলে তারা ঘরে বসে হুক্কা খাবে। আপনাদের কারণে তারা মজা পায়। তারা নিজেদের এই দেশের রাজা মনে করে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তারা কারো স্বার্থে তথ্য সংগ্রহ করলেও মাথাব্যথার কিছু নেই। আমরা আমাদের দেশে লুকিয়ে কিছু করি না। আমরা ভেরি ফেয়ার, ওপেন। আমাদের দেশে ৪৫টি প্রাইভেট টেলিভিশন রয়েছে, প্রতিদিন সাড়ে ১২ হাজার সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া প্রতি মাসে ১৮০০ সাময়িকী বের হয়। এমন নজির বিশ্বের আর কোথাও আছে? বাংলাদেশের মতো গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অন্য কোথাও নেই।’

তিনি বলেন, ‘গত ১৪ বছরে বাংলাদেশ সর্বক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি করেছে। আমরা দারিদ্র অর্ধেকে নামিয়ে দিয়েছি। যেহেতু আমরা উন্নতি করছি তাই অনেকের চোখে পড়ছে। অনেকে ফায়দাও লুটতে চাচ্ছেন। এখানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। কিন্তু আমাদের কিছু লোকজন চায় না শান্তি হোক। কারণ অশান্তি হলে তাদের ব্যক্তিগত ফায়দা হয়। এ জন্য বিদেশিদের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তারা অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়।’

মন্ত্রী বলেন, ‘অনেক বিরোধীদল দেশে উন্নতি চায় না বলে বিদেশে অপপ্রচার চালাচ্ছে, তারা নিজের পা কেটে হলেও দেশের ক্ষতি করতে চায়। অশান্তি হলে তাদেরও বারোটা বাজবে।’

এর আগে মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়, সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. এস এম শাহরিয়ারসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন।