শেষ মুহূর্তে চলছে মেট্রোরেলের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ, উদ্বোধন ২৮ ডিসেম্বর

মেট্রোরেল আধুনিক নগর যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম অনুষঙ্গ। দ্রুতগতিতে ও যানজটমুক্ত নগরী পেতে উন্নত বিশ্বের নগরীগুলোর প্রধান পরিবহন মেট্রোরেল ব্যবস্থা। এবার সে কাতারে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশও। আর মাত্র ৬ দিন পর বহুল কাঙ্ক্ষিত এই মেট্রোরেল উত্তরা থেকে দুরন্তগতিতে ছুটে চলবে আগারগাঁও পর্যন্ত।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৮ ডিসেম্বরে মেট্রোরেল চালুর মহেন্দ্রক্ষণের উদ্বোধন করবেন। যদিও এখনবধি শতভাগ কাজ শেষ হয়নি।

গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হওয়ায় মেট্রোরেলের মালামাল সরানো হচ্ছে। ফলে রাস্তা আগের মতোই প্রশস্ততা ফিরে পাচ্ছে।

অন্যদিকে মেট্রোরেলের নীচ দিয়ে মিরপুর থেকে উত্তরার বিকল্প রুটের রাস্তাও তৈরি হচ্ছে। এর পুরো সুফল পাবেন উত্তরা ও মিরপুরের কয়েক লাখ বাসিন্দা।

তবে উঠে এসেছে ভিন্ন চিত্রও। আগারগাঁও অংশের কাজ এখনও শেষ হয়নি। এ অংশের দুই মেট্রোস্টেশন কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়ায় চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। শ্রমিকরা সেখানে স্টেশনের টুকটাক কাজ শেষ করছেন। বিশেষ করে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজের তোড়জোড় চলছে শেষ মুহূর্তে।

মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক বলেছেন, শেষ মুহূর্তের এ কাজ রুটিন ওয়ার্ক। মেট্রোরেল চলাচলের ক্ষেত্রে এ কাজ কোনো বাধা নয়।

মেট্রোরেল চলতে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন বলেও মন্তব্য করেন মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

মেট্রোরেল যানজটের শহরে দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ একটি বাহন হবে বলে মনে করছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরাও।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সহকারি পরিচালক অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ বলেন, রাজধানীর বড় একটা অংশের যাত্রীদের এতে বহন করাতে পারলে মেট্রোরেলের সুফল পাওয়া যাবে। যানজট কমবে নগরীতে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী মেট্রোরেলের ভাড়া বেশি হয়েছে দাবি করে সরকারকে ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেছেন।

তিনি বলেন, মেট্রোরেল চালুর অপেক্ষায় আমরা সবাই। কিন্তু মেট্রোরেলের ভাড়া অন্য গণপরিবহন থেকে দ্বিগুণ করা হয়েছে। অন্যান্য দেশেরও মেট্রোরেল চলাচল হয়। সেখানে কিন্তু ভাড়া এতো বেশি না।

যদি দেশের মানুষ মেট্রোরেলে চড়তে না পারে ভাড়ার কারণে, সেটা দুঃখজনক। ভাড়া কমালে যাত্রী বাড়বে এবং যানজট কমবে বলে দাবি করেছেন মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

যদিও ভাড়া যৌক্তিক বলে দাবি মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের। এই ভাড়ায় চালিয়ে মেট্রোরেলকে আগে লাভজনক গণপরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে চান তারা।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন উপলক্ষে দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও স্টেশনে নেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

ঢাকার উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের প্রথম মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-৬ নামে পরিচিত। এ প্রকল্প সরকার হাতে নেয় ২০১২ সালে।

২৮ ডিসেম্বর এই পথের প্রথমাংশ উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হলেও দ্বিতীয় অংশ আগারগাঁও থেকে মতিঝিল ২০২৩ সালের শেষ দিকে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।

আর মতিঝিল থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত বর্ধিতাংশ চালু হতে পারে ২০২৫ সালে।

এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। পরে মতিঝিল থেকে কমলাপুর বাড়তি অংশ যোগ হওয়ায় ব্যয় বাড়ে ১১ হাজার ৪৯৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা। তখন সর্বমোট ব্যয় দাঁড়ায় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।

এর মধ্যে উন্নয়ন সহযোগী জাইকার অর্থায়ন ১৯ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা ও সরকারি অর্থায়ন ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।

Scroll to Top