প্রতি বছর প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশে পালিত হয় কিছু দিবস। ঐ নির্দিষ্ট দিনে অতীতের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতেই পালিত হয় এই সব দিবস। পালনীয় সেই সব দিবসগুলোর মধ্যে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবস হলো একটি।
আজ ৫ ডিসেম্বর, আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবস। যে কোনো দুর্যোগে মানবিক সহায়তা প্রদানে স্বেচ্ছাসেবকদের সচেতন ও দক্ষ করে তোলার লক্ষে দিবসটি পালিত হয়। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বর মাসের ১৭ তারিখ অনুষ্ঠিত অধিবেশনে প্রতি বছর ৫ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী দিবস পালনের জন্য সরকারগুলোর প্রতি আহবান জানানো হয়।
জীবনের সর্বত্র স্বেচ্ছাসেবীদের অবদান সম্পর্কে জনসচেতনতা এবং ঘরে ও বাইরে স্বেচ্ছাসেবায় অধিক সংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণে উৎসাহ প্রদান, আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য। দেশের বিভিন্ন স্থানে দিবসটি উপলক্ষে সভা-সেমিনারসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
স্বেচ্ছায়-স্বপ্রণোদিত হয়ে আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত হওয়ার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এটি সমাজের সব বয়সী মানুষের, সকলস্তরের মানুষেরই নৈতিক দায়িত্ব। বিশেষ করে যুবকদের ওপর এই দায়িত্বটি বেশি। দেশের জনশক্তির এক তৃতীয়াংশ যুবক। এদেরকে শক্তিতে পরিণত করার মাধ্যমে প্রত্যেককে একেকজন সেবক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সর্বোপরি দেশের প্রয়োজনে যুবকরা সংগঠিত হয়ে যে কোনো দুর্যোগ মোকাবেলা করতে পারে।
দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে স্বেচ্ছাসেবক মনোবৃত্তিকে উদ্বুদ্ধ করা এখন সারা বিশ্বেই অত্যন্ত গুরুত্ব পাচ্ছে। সেই লক্ষে গঠিত হয়েছে জাতিসংঘের স্বেচ্ছাসেবক কর্মসূচি ইউএনভি। এটি জার্মান ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের একশ’ ৩০টি দেশে তারা সক্রিয় রয়েছে এবং ৮৬টি দেশে তাদের ফিল্ড ইউনিট রয়েছে। ১৯৭০ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি ইউএনডিপি এর দপ্তরের সাহায্যে তাদের কার্যক্রম প্রচার করে।
প্রকৃত অর্থে মানবিক গুনাবলী সম্পন্ন প্রতিটি মানুষই স্বেচ্ছাসেবক। ব্যক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্রের কল্যাণে নিজের শ্রম, অর্থ, সময় ব্যয় করার মনমানসিকতা পোষণ করা উচিত প্রতিটি সুস্থ স্বাভাবিক মানুষেরই। আর মানবজাতির মধ্যে এই ধরণের গুণাবলী যাদের আছে তারাই প্রিয় মানুষের কাছে যেমন, সৃষ্টিকর্তার কাছেও তেমনি।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের সমাজে প্রকৃত নিঃস্বার্থ স্বেচ্ছাসেবকদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। মেকি লোক দেখানো পরোপকারীরা সমাজের উন্নতি নয়, বরং সমাজের শান্তি বিঘ্নিত করছে, অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। আজকের এই আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবসে আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে, সবার মেধা শ্রম নিয়োজিত হোক শতভাগ মানব কল্যাণে।