রিজার্ভের টাকা কেউ চিবিয়ে খায়নি, গিলে খায়নি আর নিয়েও যায়নি বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্তব্য করেছেন। এ সময় আওয়ামী লীগ সরকার একটা টাকাও অপচয় করে না, বরং সব টাকা জনগণের কল্যাণে খরচ করে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
আজ শনিবার ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’র উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকাল বিরোধী দল থেকে প্রশ্ন করে রিজার্ভের টাকা গেল কোথায়, সারা দেশে অপপ্রচার করে। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন রিজার্ভ ছিল ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার। পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিল তারা, এ সময় রিজার্ভ ৫ বিলিয়নের মতো বৃদ্ধি পেয়েছিল। আমরা সেই রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়নে পৌঁছাই।’
‘এর মধ্যে করোনার আঘাত, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা তৈরি হয়েছে। আমাদের অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়েছে। মনে রাখতে হবে, আমরা করোনার ভ্যাকসিন কিনে এনেছি। বিনা পয়সায় টেস্ট করিয়েছি, টিকা দিয়েছে। কোনো উন্নত দেশও বিনা পয়সায় টেস্ট করেনি, ভ্যাকসিনও দেয়নি’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘খাদ্যশস্য, জ্বালানি তেলসহ এখনো অনেক পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে। যা কিছু আমদানি করতে হচ্ছে সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। রিজার্ভ যা খরচ করেছি জনগণের কল্যাণে, জনগণের মঙ্গলে।’
রিজার্ভের অর্থ থেকে বিমান কেনা হয়েছে, নদীতে ড্রেজিং করা হয়েছে, উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়েছে বলেও জানান সরকারপ্রধান। তিনি আরও বলেন, অন্য দেশের ডলার আনলে সুদ দিতে হয়। নিজেদের দেশে বিনিয়োগ করলে দেশের টাকা দেশেই থাকে। পয়সা কেউ তুলে নিয়ে চলে যায়নি।
‘তাদের মনে সব সময় ও রকম ভয় থাকে, এ কথা তারা বলে। বিএনপি বিশেষ করে বলবে। বলার কারণটা হচ্ছে, তাদের নেতা তারেক জিয়া মানি লন্ডারিং কেসে ৭ বছরের কারাদণ্ড ও ২০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড পেয়েছে এবং সে পলাতক আসামি। মানি লন্ডারিং যাদের অভ্যাস তারা শুধু ওইটাই জানে টাকা বোধ হয় সব নিয়ে যেতে হয়। আওয়ামী লীগ সরকার এ দেশের একটা অর্থও অপচয় করে না। প্রতিটি অর্থ ব্যয় করে বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থে-কল্যাণে এবং তাদের ভালো-মন্দ দেখে’, বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, ‘টাকা কেউ চিবিয়ে খায়নি, গিলেও খায়নি আর নিয়েও যায়নি। তবে হ্যাঁ, বিএনপি বলবে। তারা নিজেরা চুরি করে অর্থ-সম্পদ বানিয়েছে। কারণ তাদের তো কিছুই ছিল না। জিয়াউর রহমান যখন মারা যায়, আমরা ৪০ দিন টেলিভিশনে দেখেছি, ভাঙা স্যুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জি ছাড়া কিছু রেখে যায়নি। পরবর্তী সময়ে দেখি হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক তারা। জনগণের অর্থ আত্মসাৎ করেই তারা তা হয়েছে।’
সবাইকে উৎপাদনে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে। বিশ্বব্যাপী একদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত, তারপর করোনা, তার ওপর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা; যার ফলাফলে আজকে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম-পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে নিজেদের সফল উৎপাদন করতে হবে। খাদ্য উৎপাদন, পুষ্টি নিশ্চয়তার ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের মাটি মানুষ আছে, আমরা তা করতে পারব। যাদের নিজের জমি আছে সেখানে যাতে চাষ হয় সে ব্যবস্থা নেবেন। যদি কখনো বিশ্বে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় আমাদের বাংলাদেশে যেন সেই ধাক্কা কোনোভাবেই না লাগে। আমাদের সাবধানতা আমাদেরই নিতে হবে।’
‘আমরা চাই, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। আমরা বঙ্গবন্ধু টানেল, এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল তৈরি করছি। সবগুলোতেই আমাদের টাকা খরচ করতে হচ্ছে। রিজার্ভের টাকা তো লাগছে। এটা তো বাস্তবনা। মানুষের যোগাযোগ-চলাচল আরও সহজ হয় যাতে তার ব্যবস্থা করছি। আমরা সড়ক, নৌ, রেল ও আকাশ পথ; সবগুলোর ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছি। এটা আকাশ থেকে পড়েনি। বেশির ভাগ কাজ আমরা নিজেদের অর্থ দিয়ে করছি। যেন কারও কাছে হাত পেতে চলতে না হয়’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু করে আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল হয়ে নবীনগর মোড় এবং ইপিজেড হয়ে চন্দ্রা মোড় পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে। ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে শীর্ষক এই প্রকল্প ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার সঙ্গে ৩০টি জেলার সংযোগ স্থাপনকারী আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া ও বাইপাইল-চন্দ্রা করিডোরে যানজট অনেকাংশে কমবে।
প্রকল্পের আওতায় সাভার ইপিজেড থেকে নবীনগর সড়কে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ দুটি সেতু নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। চীনের সহায়তায় প্রকল্পটি পরিচালিত হবে।