ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের পূর্বাভাসের গরমিল তথ্য নিয়ে প্রশ্ন

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের পূর্বাভাসের তথ্যে ব্যাপক গরমিল দেখা গেছে। বাংলাদেশের উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত করার সময় নিয়ে একেক সময় একেক তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ ছাড়া ঝড়ের গতিপথ নিয়েও সঠিক সময়ে বার্তা দিতে পারেনি। এতে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদদের তথ্য বিশ্লেষণের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে গত সোমবার রাত ১০টায় একটি বিশেষ বুলেটিন প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, ‘ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং রাত নয়টায় ভোলার কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। তিন-চার ঘণ্টার মধ্যে এটি উপকূল অতিক্রম করতে পারে।’

ওই দিন সাড়ে তিন ঘণ্টা আগে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার বুলেটিনে বলা হয়েছিল, ‘ঘূর্ণিঝড়টি আজ (সোমবার) মধ্যরাত/আগামীকাল ভোর নাগাদ ভোলার কাছ দিয়ে অতিক্রম শুরু করতে পারে।’ সাড়ে তিন ঘণ্টার ব্যবধানে আবহাওয়ার এমন পূর্বাভাস নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বাংলাদেশের উপকূলের কোন অঞ্চল দিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি ঢুকবে, সেটি নিয়েও বিভ্রান্তি ছিল। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বেলা দুইটার বুলেটিনে বলা হয়েছিল, ‘ঘূর্ণিঝড়টি পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে।’ সাড়ে চার ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার বুলেটিনে বলা হয়, ‘এটি ভোলার কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম শুরু করতে পারে।’

এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সানাউল হক মণ্ডল গণমাধ্যকে বলেন, সন্ধ্যার সময় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে এটি ভুল ব্যাখ্যা। সন্ধ্যার পর আসলে ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হয়েছিল। আমরা উপকূল অতিক্রম করার কথা যখন বলি তখন কিন্তু ঝড়ের কেন্দ্রের হিসাব ধরি। সিত্রাং ছিল ৪০০ থেকে ৪৫০ ব্যাসের একটি ঘূর্ণিঝড়। সিত্রাংয়ের কেন্দ্র রাত ৯টার দিকে আঘাত হেনেছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা প্রথমে বলেছিলাম এটি খেপুপাড়ার কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রটা আরেকটু উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই সময় মুভমেন্টটা অনেক বেশি ছিল। তখন আমরা বলেছিলাম ভোলার নিকট দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করবে।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের মতো দুর্যোগের পূর্বাভাস যতটা সম্ভব নির্ভুল ও যথাসময়ে দেওয়া উচিত। কোন এলাকায় আঘাত হানতে পারে, সেটিও সঠিকভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন। এতে ওই অঞ্চলের মানুষ নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার পর্যাপ্ত সময় পাবেন। এর আগে সিডর, আইলা, ইয়াসের মতো ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনেকটাই সঠিক ছিল।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য এবং দুর্যোগবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘সিত্রাং আঘাত হানার সময় নিয়ে বিভ্রান্তি ও পূর্বাভাস না মেলার বিষয়ে আমি আবহাওয়া অধিদপ্তরের কাছে জানতে চেয়েছিলাম। তাদের সঙ্গে কথা বলে আমার মনে হয়েছে, আবহাওয়াবিদ্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়ার আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে জনবল কম আছে। এ ক্ষেত্রে তাঁদের আরও দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। নইলে ভবিষ্যতে এমন ভুল থেকে আরও বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে।’

Scroll to Top