আপাতত বাড়ছে না পাইকারি বিদ্যুতের দাম

পাইকারি বিদ্যুতের দাম আপাতত বাড়ছে না। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে দাম বাড়ানোর সবুজ সংকেত পায়নি। আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোনো ধরনের বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে না বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিইআরসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় বিইআরসি থেকে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও লোডশেডিংয়ে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বিবেচনায় রেখে সরকার বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর জায়গা থেকে সরে এসেছে। আগামী বছর মন্দার কবলে পড়তে পারে বিশ্ব। এ অবস্থায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ুক—তা চাইছেন না সরকারের নীতিনির্ধারকরা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়বে কিনা, কাল (বৃহস্পতিবার) জানতে পারবেন। তবে আমরা মূল্যস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সব বিবেচনায় রেখেই রায় দেব।’

এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে জ্বালানি সংকটের কারণে অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রেখেছে পিডিবি। এতে উৎপাদন কম হওয়ায় লোকসানও কমে এসেছে।

জানা গেছে, এক মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসে ৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এ হিসাবে ৯৪০ ঘনফুট গ্যাস থেকে ৫ হাজার ৬৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। দিনে ৯ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সস্তা উৎস থেকে উৎপাদন করছে পিডিবি। এর মধ্যে কম্বাইন্ড সাইকেলে ৫ হাজার ৬৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় ইউনিটপ্রতি ২ টাকা ৫০ পয়সা।

এ ছাড়া বিভিন্ন কারণে ছোট আকারের কিছু সিম্পল সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে হয়। সেখানে পেট্রোবাংলা আরও ৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে। এই সিম্পল সাইকেলে প্রতি মিলিয়ন ঘনফুটে চার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। এখানে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কম্বাইন্ড সাইকেল থেকে ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ২০ পয়সার বেশি হয়। অর্থাৎ বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ পড়ে ৩ টাকা ৭০ পয়সা। প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ থেকে এই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।

এ ছাড়া ভারত থেকে ইউনিটপ্রতি সাড়ে ৫ টাকা দরে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। কয়লা ও কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসে। কাপ্তাইয়ের প্রতি ইউনিটের উৎপাদন খরচ ১ টাকারও নিচে। আর কয়লায় উৎপাদন ব্যয় ৭ টাকার কাছাকাছি। এখন দিনে ১০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ পিডিবি উৎপাদন করে না। অন্যদিকে রাতে ১২ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করা হয়। এর মধ্যে জ্বালানি তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে গড়ে ২ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট পেলেই হয়। তেল থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম পড়ে ১৫ টাকা ইউনিট।

বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিইআরসির কর্মকর্তারা মনে করছেন, এখন দাম না বাড়ালেও কোনো সমস্যা হবে না। সামনে শীত মৌসুম। অক্টোবর থেকে পরের বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের তাপমাত্রা কম থাকে। এ সময় সংগত কারণেই বিদ্যুতের চাহিদা কমে যায়। যে কারণে এখন বিদ্যুতের দাম না বাড়ালেও কোনো সমস্যা হবে না।

তারা আরও জানান, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতেই সরকার এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর বিষয়টি দেখা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছেন তিনি।

Scroll to Top