প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারায়ণগঞ্জে দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু উদ্বোধন করলেন।
আজ সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নাসিম ওসমান নামকরণ করা সেতুটির।
সেতুটি পদ্মা সেতুর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছে। এর ফলে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ এবং পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা, যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া থেকে আসা মানুষ ঢাকা শহরে প্রবেশ না করেই সরাসরি চট্টগ্রাম যেতে পারবেন। এর ফলে যেমন দূরত্ব কমে যাবে, তেমনি ঢাকার ওপর যানবাহনের চাপও কমবে।
প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহন ও যাত্রীরা যাত্রাবাড়ী-পোস্তগোলা ব্রিজ হয়ে অথবা চাষাঢ়া-সাইনবোর্ড রুটে চট্টগ্রামে যান। এখন শীতলক্ষ্যা সেতু দিয়ে যানবাহনগুলো ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ শহরকে বাইপাস করে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। এতে রাজধানী ও নারায়ণগঞ্জ শহরের ওপর চাপ কমবে, তীব্র যানজটের ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ নদীর ৩-৫ কিলোমিটার দূরত্ব নৌকায় পার হতে অনেক সময় লেগে যেতো। এ জন্য দূরত্ব অনুযায়ী গুনতে হতো টাকাও। এছাড়া সড়ক পথে গেলে প্রায় ৩০ কিলোমিটার ঘুরতে হতো। এখন নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের মানুষ শীতলক্ষ্যার এই সেতু দিয়ে কম সময়ে যাতায়াত করতে পারবে।
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, সেতুটি পূর্বে বন্দর উপজেলার মদনগঞ্জকে পশ্চিমে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সৈয়দপুরের সাথে সংযুক্ত করেছে। এত ফলে নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ জেলার সাথে পদ্মা সেতুর সংযোগ স্থাপিত হয়েছে।
‘আগে নৌকায় করে নদী পথে চলাচল করতে গিয়ে অনেক দুর্ঘটনা এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে সেতুটি স্থানীয়দের জন্য নিরাপদ যোগাযোগ নিশ্চিত করবে। এছাড়া সেতুটি উদ্বোধনের পর দেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে চাঙা হবে।’
সেতুর প্রকল্প পরিচালক শোয়েব আহমেদ বলেন, ১.২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৬০৮.৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের ২৬৩.৩৬ কোটি টাকা, বাকি ৩৪৫.২০ কোটি টাকা সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্টের (এসএফডি)।
ওয়াকওয়েসহ ৩৮টি স্প্যানের ওপর দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি। পাঁচটি নদীর ওপর দিয়ে যাওয়া সেতুটি হাঁটার পথসহ প্রস্থ ২২.১৫ মিটার। ছয় লেনের টোল প্লাজায় দিতে হবে ৫ টাকা আর সর্বোচ্চ ৬২৫ টাকা।
স্থানীয়রা বলছেন, শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি নারায়ণগঞ্জ শহর ও বন্দর উপজেলাকে সংযুক্ত করায় যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তন আসবে। ঢাকার পাশ্ববর্তী এই জেলায় প্রচুর কলকারখানা থাকায় অর্থনীতিও চাঙা হবে। তবে সেতুটির দুই পাশের সড়কের নির্মাণ ও সংস্কার কাজ শেষ হলে পুরোপুরি সুফল মিলবে।
প্রকল্পটি ২০১০ সালে একনেকে অনুমোদন পায়। নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি।