নেপালের লুম্বিনীতে ৬০ কোটি ৬৭ লাখ ৯৭ হাজার টাকার ব্যয়ে একটি বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ করবে বাংলাদেশ সরকার। এ লক্ষ্যে সরকার একটি ডিপিপি প্রস্তুত করেছে বলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান জানিয়েছেন।
গতকাল রোববার (১৫ মে) মেরুল বাড্ডায় বুদ্ধ পূর্ণিমা ২০২২ উপলক্ষে ‘বুদ্ধ পূর্ণিমার আলোকে শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা জানান। এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, চলতি বছর বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে আরও ২ কোটি টাকা দেশের বৌদ্ধ বিহারে দেওয়া হয়েছে। বৌদ্ধদের জন্য ঢাকার পূর্বাচলে আন্তর্জাতিক মানের বৌদ্ধ বিহার এবং বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভবন কমপ্লেক্স বানানোর জন্য ২১ কাঠা জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থায়নে নেপালের লুম্বিনীতে একটি বৌদ্ধ বিহার নির্মাণের লক্ষ্যে ৬০ কোটি ৬৭ লাখ ৯৭ হাজার টাকার একটি ডিপিপি প্রস্তুত করা হয়েছে। নেপাল সরকার বিভিন্ন দেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে আশ্রম-প্যাভিলিয়ন নির্মাণের জন্য বাংলাদেশের অনুকূলে একটি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের সভাপতি অধ্যক্ষ ভদন্ত ধর্মমিত্র মহাথের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত প্রমুখ। বিশেষ অবদানের জন্য অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়াকে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, বৌদ্ধ ধর্মের মহান প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ শুধু ভারত উপমহাদেশের নয়, তিনি ছিলেন সারা বিশ্বের আলোকবর্তিকা। তার প্রচারিত ধর্মীয় মতবাদ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য এক শান্তির পথ। আদর্শের পথ, কুশলের পথ। কল্যাণের পথ।
ফরিদুল হক খান বলেন, লোভ, মোহ, হিংসা-দ্বেষ, লালসাকে অতিক্রম করে গৌতম বুদ্ধ সারা জীবন মানুষের কল্যাণে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় অহিংসা, সাম্য, মৈত্রী ও করুণার বাণী প্রচার করেছেন। শান্তি ও সম্প্রীতির মাধ্যমে আদর্শ ও সুশীল সমাজ গঠন ছিল তার পরম লক্ষ্য। বিশ্ব মানবতার কল্যাণ সাধন, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও হিংসায় উন্মত্ত পাশবিক শক্তিকে দমন করার জন্য আজকের পৃথিবীতে বুদ্ধের শিক্ষা একান্ত প্রয়োজন।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের সরকারের স্লোগান হলো— ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। এ দেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা যুগ যুগ ধরে আর্থসামাজিক উন্নয়নে সমানভাবে অংশগ্রহণ করে আসছেন। এ অঞ্চলের সভ্যতা বিনির্মাণে বৌদ্ধ ধর্মের অসংখ্য নিদর্শন এখনও আমাদের কাছে দীপ্তিমান। মহাস্থানগড় সোমপুর বিহার, ময়নামতি বিহার, বাংলা সাহিত্যের আদি কবিদের রচিত চর্যাপদ এ অঞ্চলে উন্নত বৌদ্ধ সভ্যতার সাক্ষ্য বহন করে।
বর্তমান সরকারের আমলে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে ফিরিস্তি তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের আমানত তহবিল ৪ (চার) কোটি থেকে ৭ (সাত) কোটি টাকায় উন্নীত করেছে। বৌদ্ধ বিহার-প্যাগোডা মেরামত ও সংস্কারের জন্য ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ে ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা অনুদান অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেশের অসচ্ছল বৌদ্ধ বিহারে দিয়েছে। অসচ্ছল ভিক্ষু-শ্রমণ ও অসহায় ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য ৩৭ লাখ ৬১ হাজার টাকা দিয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল হতে মোট ৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকায় দেশের ২৪০০টি বৌদ্ধ বিহারে বিতরণ করা হয়েছে। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রায় দেড় হাজার বৌদ্ধ প্যাগোডা ও শ্মশানে ৪০ কোটি ২৮ লাখ ৯ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে। প্যাগোডা ভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রকল্পের আওতায় ২০১৫ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মোট ১০০টি শিক্ষা কেন্দ্রে ৬ হাজার বৌদ্ধ শিশুকে শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে।
বর্তমানে এ প্রকল্পের ২য় পর্যায়ে ১২টি জেলার ৬২টি উপজেলায় ৩০০টি শিক্ষাকেন্দ্রের মাধ্যমে ২০ হাজার বৌদ্ধ শিশুকে প্রাক-প্রাথমিক, ধর্মীয় ও নৈতিকতা শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে। ৩০০জন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মহিলা ও পুরুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে, বলেন প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান।