শিশু-কিশোরদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের প্রতি গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি এলাকায় খেলার মাঠ রাখার তাগিদ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের শিশুরা, এখন তো সব ফ্ল্যাটে বাস করে, ফ্ল্যাটে বাস করে করে তারা ফার্মের মুরগির মতোই হয়ে যাচ্ছে। তারা মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ আর আইপ্যাড নিয়েই সারাক্ষণ পড়ে থাকে। এটা আসলে শিশুর মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থতার লক্ষণ নয়।
গতকাল বুধবার (১১ মে) সকালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার ২০১৩-২০২১’- বিতরণ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, খেলাধুলা ও দৌড়ঝাঁপের মধ্য দিয়ে শিশু-কিশোররা শারীরিক-মানসিকভাবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়।
খেলাধুলার গুরুত্ব তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, খেলাধুলাজাতি গঠনে বিশেষ অবদান রাখে বলে আমি বিশ্বাস করি। … খেলাধুলা এবং শরীরচর্চার মাধ্যমে শারীরিক-মানসিকভাবেও আমাদের ছেলেমেয়েরা যথেষ্ট উন্নত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলাধুলার বিষয়ে আমাদের আরও বেশি উদ্যোগী হওয়া উচিত। সবচেয়ে দুর্ভাগ্য হলো- ঢাকা শহরেই খেলাধুলার জায়গা কম। এরই মধ্যে আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছি, যেন প্রতিটি এলাকায় খেলার মাঠ থাকে। যেখানে খালি জায়গা পাচ্ছি আমরা খেলার মাঠ করে দিচ্ছি।
রাজধানী ঢাকার বাইরে দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম করার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, তৃণমূল পর্যায়ে খেলাধুলার সুবিধা উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে দেশের ১২৫টি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ১৮৬টি উপজেলায় নির্মাণকাজ চলছে। তৃতীয় পর্যায়ে অবশিষ্ট ১৭১টি উপজেলায় এ মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে।
প্রতিটি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণকাজ দ্রুত সম্পন্ন করারও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সন্তানের বাবা-মা ও অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অন্তত বাবা-মা ও অভিভাবকদের অনুরোধ করবো- কিছু সময়ের জন্য হলেও ছেলেমেয়েদের হাত-পা ছুড়ে খেলার সুযোগ করে দিন। আমরা প্রতিটি এলাকায় খেলার মাঠ রাখার উদ্যোগ নিয়েছি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুজিব পরিবারের অন্য সদস্যদের খেলাধুলার প্রতি আগ্রহের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রিয় খেলা ছিল ফুটবল। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন, “আব্বার টিম ও আমার টিমে যখন খেলা হতো তখন জনসাধারণ খুব উপভোগ করতো। আমাদের স্কুল টিম খুব ভালো ছিল। মহকুমায় যারা ভালো খেলোয়াড় ছিল, তাদের এনে ভর্তি করতাম এবং বেতন ফ্রি করে দিতাম”।
দেশীয় অনেক খেলা এখন বিলুপ্তির পথে। এসব খেলায় আবারও সুদিন ফেরানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলে অনেক খেলা আছে। এসব গ্রামীণ খেলাগুলো কিছু কিছু চালু করা হয়েছে। এগুলো পুরোপুরিভাবে সচল করতে হবে। এগুলো চালু করতে খুব বেশি খরচও লাগে না। নিজেরা খেলবে, আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতা, আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতা, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতা যেন ব্যাপকভাবে চলে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা এ ব্যাপারে যথেষ্ট সহযোগিতা করে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে যা যা প্রয়োজন আমরা দিচ্ছি।
খেলাধুলার উন্নয়নে সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপ এবং সফলতার কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে ক্রীড়া ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন করে যাচ্ছে। ২০০৯ থেকে ২০২১ সময়কালে ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশের সফলতার পরিসংখ্যান উত্তরোত্তর বাড়ছে। এ সময়ে বিভিন্ন ক্রীড়া ডিসিপ্লিনে আমাদের জাতীয় দলগুলো আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে মোট ৪৭৩টি স্বর্ণ, ৪৭৪টি রৌপ্য, ৫৪৭টি তাম্র পদক অর্জন এবং ৯৬ বার চ্যাম্পিয়ন, ২৩ বার রানার্সআপ ও ২১ বার তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে।
নিয়মিত খেলোয়াড়দের পাশাপাশি অটিস্টিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের কৃতিত্বপূর্ণ অর্জনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, অটিস্টিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়রাও ভালো পারদর্শিতা দেখাচ্ছে। তারা কিছু ক্ষেত্রে সুস্থদের চেয়েও ভালো করছে।
সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় অটিস্টিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়রা বিভিন্ন সময়ে স্পেশাল অলিম্পিকে অংশ নিয়ে ২১৬টি স্বর্ণ, ১০৯টি রৌপ্য ও ৮৪টি ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করে দেশের জন্য সম্মান বয়ে এনেছে। এ বছরের মার্চে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত ‘বঙ্গবন্ধু চার-জাতি ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ ভারতকে ৯ উইকেটে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
অনুষ্ঠানে ৮৫ জন গুণী খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠককে ২০১৩ থেকে ২০২০ সালের জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল ৭৭ জন পুরস্কার বিজয়ীর হাতে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার তুলে দেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে (ভার্চুয়ালি) আরও ৮ জন বিজয়ীর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেকে পাচ্ছেন একটি ১৮ ক্যারেট মানের ২৫ গ্রাম ওজনের স্বর্ণপদক, এক লাখ টাকার একটি চেক এবং একটি সম্মাননাপত্র।