বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বা শক্তি উৎপাদনে গ্যাস একটি প্রধান উৎস। গ্যাসের ওপর অব্যাহত নির্ভরশীলতার কারণে জলবায়ু, পরিবেশ, স্বাস্থ্য এবং অর্থনীতিতে বিপর্যয় মোকাবিলা বাংলাদেশকে করতে হবে। এশিয়ার অষ্টম বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ বাংলাদেশ। তবে বর্তমান হারে উৎপাদন অব্যাহত থাকলে দেশের স্বীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত শেষ হয়ে যেতে পারে পাঁচ বছরেরও কম সময়ে। এই ক্রমবর্ধমান উৎপাদন হার অব্যাহত থাকবে। তার ফলে ২০২৫ সাল নাগাদ গৃহস্থালি গ্যাসের সরবরাহ ২৫ শতাংশ হ্রাস পাবে।
‘বাংলাদেশ এট এন এনার্জি ক্রসরোডস’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য-বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা আরএমআই গতকাল শনিবার (২৩ এপ্রিল) এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনটি এমন একটি সময়ে উপস্থাপিত হলো যখন দেশ এবং দেশের মানুষ বিধ্বংসী এবং অসমতাপূর্ণ জলবায়ু প্রভাবের সম্মুখীন হচ্ছে এবং গ্লোবাল মিথেন প্রতিশ্রুতিকে সমর্থন করার জন্য বাংলাদেশ ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। ঐ প্রতিশ্রুতিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে অতি-শক্তিশালী গ্রিন হাউজ গ্যাস ৩০% কমাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরএমআই বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বাংলাদেশ যে পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন করে তার চেয়ে বেশি খরচ করে, যার ফলে দেশে এলএনজি আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা ক্রমাগত বাড়ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যবহৃত গ্যাসের ৭০ শতাংশই আসে আমদানিকৃত এলএনজি থেকে। ২০২০ সালে বাংলাদেশ ৪৩ লাখ মেট্রিক টনের বেশি এলএনজি আমদানি করে এবং গ্যাসের চাহিদা আরো বাড়ার বাস্তবতা থাকায় ২০১৯ সালের তুলনায় ২০৪০ সাল নাগাদ এলএনজি আমদানি ৫০ গুণ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। ২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের আমদানিকৃত এলএনজি সৃষ্ট নির্গমনের পরিমাণ ৩৯০-৯০০ মেট্রিক টন কার্বন-ডাইঅক্সাইডের সমতুল্য, যা ১০০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত্কেন্দ্রের মোট নির্গমনের চেয়েও বেশি।
এ প্রসঙ্গে সিপিডির (সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ) রিসার্চ ডিরেক্টর ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বিশ্লেষণ থেকে এটা স্পষ্ট যে গ্যাস, প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি যে আকারেই হোক, তা অর্থনীতির পাশাপাশি পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের ওপর বহুমাত্রিক বিরূপ প্রভাব ফেলবেই। গ্যাস বা এলএনজিকে জ্বালানির একটি ‘বিশুদ্ধতর’ ধরন বা জ্বালানির ‘আপত্কালীন’ ধরন হিসাবে চিত্রিত করা হলে গ্যাস বা এলএনজি সম্পর্কে সত্যটা বলা হয় না। তাই ধনী দেশগুলোর উচিত পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে গ্যাস সংক্রান্ত প্রতিকূলতার তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে বৃহত্তর স্বচ্ছতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া।’
আরএমআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহযোগী এবং এই বিশ্লেষণের প্রণেতা ফ্রান্সেস রিউল্যান্ড বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো দেশগুলো এবং বিশ্বের জন্য সম্ভবত বিগত যে কোনো সময়ের চেয়ে, মিথেন অনেক বেশি মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর কারণ হলো মিথেন নির্গমন জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত এবং জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতার ঝুঁকি অনেক বেশি ক্ষতিকর হয়ে উঠছে।