প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন মাতৃস্নেহে দেশ পরিচালনা করলে জনগণ অবশ্যই সমর্থন করবে। তিনি বলেন, ‘একটি বিষয় বোঝা উচিত যে নারীরা শুধু নারী নয়, নারীরা মা-ও, তাই আপনি (নেতা) যদি মাতৃস্নেহে দেশ পরিচালনা করেন, জনগণ আপনাকে সমর্থন করবে।’
দুবাই এক্সপো ২০২০-এর মহিলা প্যাভিলিয়নে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত ‘রিডিফাইনিং দ্য ফিউচার অব উইমেন” শীর্ষক এক উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী শ্রোতাদের তার সরকারের সাফল্যের মূল কারণ তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের জনগণ তাকে সমর্থন দিয়েছে, কারণ তারা উপলব্ধি করেছে যে তারা উপকৃত হবে এবং উন্নয়ন দেখতে পাবে।
কিন্তু এটা এতটা সহজ ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে তার পুরো পরিবার- বাবা, মা, তিন ভাই এবং দুই ভ্রাতৃবধূকে হত্যা করা হয়েছিল এবং শুধুমাত্র তিনি এবং তার ছোট বোন এই হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি যখন জাতির পিতা হত্যার পর দেশে ফেরেন, তখন সেই খুনিচক্র এবং যুদ্ধাপরাধীরা ক্ষমতায় ছিল। তিনি বলেন, কাজেই আমার যাত্রাটা খুব মসৃণ ছিল না। তিনি বারবার হত্যা প্রচেষ্টার মুখোমুখি হয়েছেন কিন্তু এটিকে পাত্তা দেননি উল্লেখ করে বলেন, আমি ভেবেছিলাম যে আমাকে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে।
রাজনীতি ও সরকারে তাকে সহযোগিতা করার জন্য তিনি তার পুরুষ সহকর্মীদের প্রশংসা করেন এবং বলেন, আমাকে অবশ্যই তাদের প্রশংসা করতে হবে। তারা আমাকে ব্যাপকভাবে সহযোগিতা করেছেন।
নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সংসদের একটি অনন্য পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন স্পিকার, সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা এবং সংসদ উপনেতা নারী।
তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর প্রায় ২১ বছর সামরিক শাসকরা দেশ শাসন করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন তিনি সরকার গঠন করেন তখন তিনি দেখেন, নারীদের কোথাও কোনো স্থান নেই। এরপর তিনি নারীদের জন্য কিছু উদ্যোগ নেন, যার মধ্যে রয়েছে- স্নাতক স্তর পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষা নিশ্চিত করা, বিচার বিভাগ, পুলিশ এবং অন্যান্য জাতীয় পরিমন্ডলের উচ্চ পদে তাদের জন্য চাকরির সুযোগ তৈরি করা।
জাতির পিতাই তার শিক্ষাগুরু উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার কাছ থেকে দেশ ও এর সমস্যাগুলো সম্পর্কে তিনি জেনেছেন। তিনি বলেন, আমি দেশ এবং এর সমস্যা জানতাম। আমি আমার বাবার কাছ থেকে শিখেছি, আমার বাবাই আমার গুরু। শুধু তাই নয়, আমি (তার কাছ থেকে) আমার মানুষ ও দেশের প্রতি ভালোবাসা এবং সেই সাথে কীভাবে দরিদ্রদের জন্য কাজ করতে হয় তাও শিখেছি।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপতির কূটনৈতিক উপদেষ্টা ড. আনোয়ার বিন মোহাম্মদ গারগাশ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রতিমন্ত্রী রিম আল হাশিমি, ইউএনএফপিএর নির্বাহী পরিচালক ড. নাতালিয়া কানেম, ডব্লিউটিও মহাপরিচালক ড. এনগোজি ওকোনজো-ইওয়ালা এবং কার্টিয়ার ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট ও সিইও সিরিল ভিগনারন প্যানেলে বক্তব্য রাখেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী দুবাই এক্সিবিশন সেন্টারে দুবাই এক্সপো-২০২০-এর বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন এবং ইউএই প্যাভিলিয়ন পরিদর্শন করেন। পাঁচ দিনের সরকারি সফরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী এবং দুবাই শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের আমন্ত্রণে গত সোমবার সেখানে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সূত্রঃ বাসস