আজ শনিবার (৩ জুলাই) দুপুর পৌনে ১টার দিকে কর্তব্যরত ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা সুলতানা খান হীরামনি রাজধানীর শাহবাগে সেনাবাহিনী ও ট্রাফিক পুলিশের সহযোগিতায় চেকপোস্টে তল্লাশিকালে নগণ্য অজুহাতে রাস্তায় বের হওয়া তিন ব্যক্তির উদাহরণ টেনে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন……………
‘আপনারাই বলেন, এখন কি গাছপাকা কাঁঠাল নিয়ে আত্মীয়ের বাসায় যাওয়ার সময়? এক ভদ্রমহিলা আবার নবজাতক ভাইপোকে দেখতে হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। শুধু তাই নয়, নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের মতো স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানের ভুয়া স্টিকার লাগিয়ে দিব্যি প্রাইভেটকার হাঁকিয়ে বেড়াচ্ছিলেন এক ড্রাইভার।’ ওই তিনজনকেই আর্থিক জরিমানা করা হয় বলে জানান তিনি।
গত ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া করোনাভাইরাসের ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঊর্ধ্বগতির লাগাম টানতে সপ্তাহব্যাপী কঠোর লকডাউনের তৃতীয় দিনেও নানাবিধ অতি নগণ্য অজুহাতে লোকজনকে রাস্তায় বের হতে দেখা যায়।
দুপুর আনুমানিক সোয়া ১২টার দিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় চেকপোস্ট বসিয়ে রাস্তায় বের হওয়া প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন যানবাহনে চলাচলকারী ব্যক্তিদের তল্লাশি শুরু হয়। সেনা সদস্যরা প্রতিটি যানবাহন থামিয়ে বাইরে বের হওয়ার বৈধ কারণ জানতে চান। যারা বৈধ কারণ দেখাতে পেরেছেন তাদের সসম্মানে যেতে দেয়া হয় এবং যারা দেখাতে পারেননি তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে যুক্তিসঙ্গত কারণ না পেলে ট্রাফিক আইনের ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়।
নির্বাচন কমিশনের স্টিকার লাগানো একটি প্রাইভেটকার দেখে সেনা সদস্যরা সালাম দিয়ে গাড়িটি থামান। গ্লাস নামালে গাড়িচালককে দেখতে পেয়ে তার পরিচয় ও নির্বাচন কমিশনে কোন পদে কাজ করেন এবং তিনি কোথায় যাচ্ছিলেন তা জানতে চান সেনা সদস্যরা। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বাদল নামের ওই যুবক জানান, তিনি নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের কেউ না। তিনি ভাড়ায় গাড়ি চালান। কিছুদিন আগে নির্বাচন কমিশন থেকে তার গাড়িটি ভাড়া নিয়ে স্টিকারটি লাগিয়েছিল। ভুলে আর সেটি খোলা হয়নি। আজ তিনি সুযোগ পেয়ে যাত্রী পরিবহন করে কিছু টাকা রোজগারের উদ্দেশে বের হয়েছেন বলে স্বীকার করেন। এ সময় তাকে এক হাজার টাকা জরিমানা, গাড়ি থেকে নির্বাচন কমিশনের স্টিকার তুলে ফেলা ও ভবিষ্যতের জন্য হুঁশিয়ার করে ছেড়ে দেয়া হয়।
চেকপোস্টে মধ্যবয়সী এক নারীকে রিকশা থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে ম্যাজিস্ট্রেট জানতে পারেন, ওই নারীর ছোট ভাইয়ের সন্তান হয়েছে। তাই তিনি নবজাতককে দেখতে হাসপাতালে যাচ্ছেন। ম্যাজিস্ট্রেট হীরামনি জানান, কিছুক্ষণ আগে এক ব্যক্তি রিকশায় করে কাঁঠাল নিয়ে যাচ্ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদে ওই ব্যক্তি জানান, তার এক আত্মীয়ের বাসায় গাছপাকা কাঁঠালটি দিতে বের হয়েছেন।
তল্লাশিকালে একটি রিকশায় এক তরুণ-তরুণীকে দেখে আটকায় পুলিশ। তরুণী নিজেকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী পরিচয় দেন এবং তিনি বেতনের টাকা তুলে ফিরছেন বলে জানান। এ সময় ট্রাফিক পুলিশ পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে তিনি ভুলে তা বাসায় ফেলে এসেছেন বলে জানান এবং তারা চাইলে তিনি বাসা থেকে তা এনে দেখাতে পারবেন। এ সময় সেনাবাহিনীর একজন সদস্য জানান, তার মুখে মাস্ক ছিল না। তখন তরুণী উত্তেজিত হয়ে বলেন, ঘেমে যাওয়ায় সেটি দিয়ে ঘাম মুছে ফেলে দিয়ে তিনি নতুন মাস্ক পরেছেন। অযথা তাকে হয়রানি কেন করা হচ্ছে তা তিনি জানতে চান। এ সময় কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেট এসে তাকে শান্ত হতে বলেন এবং তার কথা শুনে যেতে দিতে বলেন।
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, গত দুদিনের তুলনায় লকডাউনের তৃতীয় দিন রাস্তায় প্রাাইভেটকার ও রিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন ও মানুষের উপস্থিতি বেশি। যেখানে চেকপোস্ট সেখানে যানবাহন কম থাকলেও অন্যত্র অবাধে যান চলাচল করতে দেখা গেছে। তাদের কেউ প্রয়োজনে আবার কেউ বা নগণ্য প্রয়োজনে রাস্তায় বের হয়েছেন।