কঠিন সময় পার করছে কওমি মাদরাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। গত ২৬ মার্চ নরেদ্র মোদির ঢাকা সফরকে কেন্দ্র করে বায়তুল মোকাররমে সহিংস ঘটনা ঘটে।
পরবর্তীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা, মামনুল হকের রিসোর্ট কাণ্ডের পর সিনিয়র নেতাদের ধরপাকরে চাপের মুখে কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। পরে আহ্বায়ক কমিটি গঠন ও গত ৭ জুন পুনরায় নতুন কমিটি গঠন করেছে সংগঠনটি।
দলীয় সুত্র জানায়, এপ্রিল মাসে কমিটি বিলুপ্ত করার পর সংগঠনের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল নতুন কমিটিতে কোনো রাজনৈতিক দলের কাউকে স্থান দেওয়া হবে না। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৭ জুন কমিটি গঠনের দিনও মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী ঘোষণা করেন রাজনৈতিক দলের কেউ এই সংগঠনের কমিটিতে থাকতে পারবেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজনৈতিক দলের কেউ হেফাজতে ইসলামের কমিটিতে থাকতে না পারার ঘোষণা দিলেও নবগঠিত ৩৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক দলের নেতা স্থান পেয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন বর্তমানে রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন।
নতুন কমিটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এতে রাজনৈতিক দল, বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক), সিলেটের আজাদ দ্বীনী এদারা, তানজীমুল মাদারিসসহ কওমি ধারার সর্বোচ্চ শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশের নেতাদের পদ দেওয়া হয়েছে।
নতুন কমিটিতে হেফাজতের নায়েবে আমির হয়েছেন মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী। তিনি রাজনৈতিক দল খেলাফত আন্দোলনের আমির। যুগ্ম মহাসচিব হয়েছেন মাওলানা আনোয়ারুল করিম। তিনি আরেক রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি।
এছাড়া দাওয়া বিষয়ক সম্পাদক হওয়া মাওলানা আবদুল কাইয়ুম সোবহানী রাজনৈতিক দল খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নেতা। সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদ্রিস খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম-মহাসচিব। প্রচার সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী জামায়াতভিত্তিক ওলামা মাশায়েখ ও মসজিদ মিশন কেন্দ্রিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত।
রাজনৈতিক দলের নেতার পাশাপাশি হেফাজতের নতুন কমিটিতে আছেন আত্মীয়-পরিজনের সংশ্লেষ। সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দুই পদে আছেন মামা-ভাগ্নে। জানা গেছে হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটির আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর ভাগ্নে মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীকে ১৬ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা করা হয়েছে। যিনি দীর্ঘদিন আগে হেফাজত থেকে পদত্যাগ করে সংগঠন থেকে দূরে আছেন।
কওমি মাদরাসার আলেমরা বলছেন, নতুন কমিটি গঠনের নামে মূলত হাস্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। দলের ত্যাগী নেতাদের জেলে রেখে এ ধরণের কমিটি করাটা ঠিক হয়নি। আলেমদের অভিযোগ, রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি কওমি শিক্ষা পরিচালনায় যেসব গুরুত্বপূর্ণ বোর্ড আছে, ঘোষিত কমিটিতে এখন সেই বোর্ডের কর্তাদেরও সামনে আনা হয়েছে। এতে সারা দেশের কওমি শিক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী বলেন, এ বিষয়টি আমাদের মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দুই-একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। তারা বয়স্ক মানুষ ও সম্মানিত আলেম। তাদের কমিটিতে রাখা হয়েছে। রাজনৈতিক ব্যক্তি থাকলেও আমাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কিন্তু অরাজনৈতিক। সুতরাং এটা কোনো বিষয় না।
তিনি বলেন, মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী সাহেবের একটা ব্যক্তিত্ব আছে। উনি হাফেজ্জী হুজুরের সুযোগ্য সন্তান এবং দেশের একজন প্রবীণ আলেম। সেজন্য ওনাকে নেওয়া হয়েছে। উনিও সংগঠনের মূল কোনো দায়িত্বে নেই। এটাও মহাসচিব বলেছেন। যেকোনো সংগঠনে নিখুতভাবে অরাজনৈতিক সবাইকে নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।
নতুন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদ্রিস বলেন, বাংলাদেশে রাজনীতি ছাড়া কোনো লোক নাই। বাস্তবতা হলো যারা সংগঠনকে রাজনীতিকীকরণ করে। এটা হলো অরাজনৈতিক সংগঠন। এখানে যারা রাজনীতিকীকরণ ও দলীয়করণ করে তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। সংগঠনের মধ্যে রাজনীতিকরণ ও দলীয়করণ করা আর ব্যক্তিগতভাবে রাজনীতি করা এক নয়। তিনি নিজেও হাফেজ্জী হুজুরের প্রতিষ্ঠিত খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম-মহাসচিব পদে আছেন বলে স্বীকার করেন। এছাড়া তার দলের আমির আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, হেফাজত ইসলামের নতুন কমিটির নায়েবে আমির পদে রয়েছেন বলেও জানান।
যারা কারাগারে আছেন এবং নতুন কমিটিতে বাদ পড়েছেন তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে মাওলানা ইদ্রিস বলেন, তাদের মুক্তির জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাবো। যারা নির্দোষ প্রমাণিত হবে তাদেরতো দলীয়ভাবে মূল্যায়ন করতেই হবে। নতুন কমিটিতে আরও নেতা যোগ হবে