বৈশ্বিক মহামারি করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারনে দীর্ঘ ৪৯ দিন পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে আজ সোমবার (২৪ মে) সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে অভ্যন্তরীণ নৌপথে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল শুরু হয়েছে।
সদরঘাট টার্মিনাল থেকে ৪৩টি রুটে প্রায় দেড় শতাধিক লঞ্চ চলাচল করবে।
এদিকে লঞ্চ চলাচলের খবরে স্বস্তি প্রকাশ করেছে শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সোমবার (২৪ মে) সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, সদরঘাট প্লটুনে সারিসারি লঞ্চ বাধা। দেশের ৪৩ রুটে চলাচল করা লঞ্চগুলো এখন শুধু অপেক্ষা যাত্রীদের।
প্লটুনের যাত্রীদের নেই কোনো ভিড়, লঞ্চ কর্মচারীদের হাকডাকও কম ছিল। লঞ্চ চলাচলের শুরুর দিন সকালে যাত্রীসংখ্যা ছিল খুবই কম। সকাল থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বিভিন্ন রুটে মাত্র ১৫টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। যাত্রীদের চাপ কম থাকার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরত্ব বজায় রেখে লঞ্চে চেপেছেন যাত্রীরা। লঞ্চে প্রবেশের সময় যাত্রীদের হাতে জীবাণুনাশক দেওয়া হয়। পরীক্ষা করা হয় শরীরের তাপমাত্রা। অপরদিকে নদী বন্দরে প্রবেশের পথে জীবাণুনাশক ছিটাতে দেখা যায়।
এছাড়া মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ থেকে কিছু লঞ্চ সদরঘাট আসতে দেখা গেছে। মুন্সিগঞ্জ থেকে বন্ধন লঞ্চে ঢাকায় এসেছেন আবুসাঈদ। তিনি জানান, দেড় মাস পড় লঞ্চে উঠলাম। লঞ্চে চাপ একটু কম থাকে। তাই যাতায়াতে সুবিধা হয়।
এমভি ঈগল-৯ লঞ্চের সুপারভাইজার মো. বাপ্পি বলেন, লঞ্চ চলাচল শুরু হওয়ায় আমরা খুশি। অন্তত বেকার ঘরে বসে থাকতে হবে না।
চাঁদপুরগামী যাত্রী আলী ইসলাম বলেন, বিধিনিষেধের শুরু থেকে বাড়ি যাই না। এক সপ্তাহ ধরে বেকার বসে আছি তাই বাড়ি যাচ্ছি। মালিক যখন ডাকবে তখন আবার চলে আসবো। গত দেড় মাস অনেক কষ্টে কেটেছে। তারপরও করোনার জন্য বাড়ি যাইনি।
বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, আজ প্রথম দিন তাই চাপ নেই বলেই চলে। স্বাভাবিক সময়েও সকালে তুলণামুলক যাত্রী কম থাকে। বিকালে বেশি থাকে। কারণ দূরপাল্লার লঞ্চগুলো বিকেলে বেশি যায়।
বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ কোনো লঞ্চ অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছে কিনা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছে কিনা তা মনিটরিং করা হচ্ছে। সোমবার থেকে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে লঞ্চ চলাচল করবে। এ ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া কার্যকর থাকবে। যাত্রীদের অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে সরকারি নির্দেশনা মেনে লঞ্চ চালাতে হবে। নির্দেশনা অমান্য করলে আমরা সেই লঞ্চের রুট পারমিট বাতিল করে দেবো।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থার সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান বাদল বলেন, লঞ্চের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ২০ থেকে ২২ হাজার শ্রমিক দীর্ঘদিন ধরে বেকার। লঞ্চ চালু হওয়ার খবরে তারা সবাই আনন্দিত।
এদিকে গতকাল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে লকডাউনের আদলে দেওয়া বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়েছে সরকার। তবে তুলে নেওয়া হয়েছে আন্তঃজেলা বাস, রেল ও লঞ্চ চলাচলের ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞা।