শীঘ্রই আসছে বিধিনিষেধের নতুন নির্দেশনা

আগামী রোববার (২৩ মে) মধ্যরাতে শেষ হবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারঘোষিত চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ। তবে ধারণা করা হচ্ছে এবার বিধিনিষেধের মেয়াদ আর বাড়ছে না। এক্ষেত্রে সরকার মাস্ক পরা তথা স্বাস্থ্যবিধি মানানোর ওপর জোর দেবে।

সংক্রমণের এই পরিস্থিতিতে এবার বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করেনি কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটিও। তাই টানা এক মাসেরও বেশি সময় বিধিনিষেধের পর সরকারও আর জনগণের জীবন-জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত করা বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়াতে চায় না।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণ যেহেতু অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে, তাই এখন স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর জোর দিলেই সামনের দিনগুলোতে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভবনা থাকবে না। এভাবেই চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। তারপরও সবকিছু আগামী রোববারের মধ্যে চূড়ান্ত হবে।

নতুন করে বিধিনিষেধ দেয়া না হলেও রোববার (২৩ মে) প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ কিছু নির্দেশনা দিয়ে। তবে সরকার যদি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আরও সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে চায়, তাহলে বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

গত ১৮ মে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সর্বশেষ ভার্চুয়াল সভা হয়। সেই সভার সিদ্ধান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়। সভায় বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ানোর কোনো সুপারিশ করা হয়নি।

জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লা শুক্রবার (২১ মে) বিকেলে বলেন, “গত ১৮ মে আমরা যেসব সিদ্ধান্ত জানিয়েছি, এরপর আর কোনো আপডেট নেই, এরপর আর কোনো মিটিংও হয়নি।”

তিনি আরো বলেন, “এখন আমাদের মূল ফোকাস দু’টি জায়গায়- একটি হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য সরকারের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা নেয়া। অন্যদেরও সহকারকে সহযোগিতা করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে বিপদ আছে।”

“বিধিনিষেধ ভালো কিন্তু বিধিনিষেধের একটি সীমাবদ্ধতা আছে যে, একটি সার্টেন টাইম পর কন্টিনিউ করতে গেলে মানুষের জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সেজন্য যখন সংক্রমণ খুব দ্রুত বাড়বে তখন হার্ডব্রেক হিসেবে লকডাউন দিতে হবে। আর লকডাউনের ফলাফল যখন পাবো, যেমন আমরা পেয়েছি- এখন মূলত ফোকাস করতে হবে স্বাস্থ্যবিধির ওপরে। এর বিকল্প কিছু নেই।”

অধ্যাপক শহিদুল্লা আরও বলেন, “আর দ্বিতীয় হলো- টিকা কীভাবে আরও বিভিন্ন সোর্স থেকে এনে টার্গেট পপুলেশন যে ১২ কোটি নির্ধারণ করেছি, তাদের সেটা দেয়া নিশ্চিত করা। অর্থাৎ একটা হলো স্বাস্থ্যবিধি, আরেকটা হল টিকা।”

“ঈদের সময়ের পরিস্থিতির কারণে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাটা এখনও আছে। এই মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে পুরো জুন মাসই ঝুঁকির মধ্যে আছি আমরা” যোগ করেন তিনি।

এক্ষেত্রে লকডাউন বা বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ানো প্রয়োজন মনে করছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সেটা সরকার বুঝবে। যত ঢিলেঢালাই হোক লকডাউনের একটা বেনিফিট আছে। এ সময়ে মানুষের গ্যাদারিং হয় এমন অনুষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকে, যেগুলো ইনফেকশনের বড় বড় সোর্স। সরকার যদি অ্যাফোর্ড করতে পারে লকডাউন আরও এক-দুই সপ্তাহ বাড়াতে পারে, সেটা খারাপ হবে না- এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত।”

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ানোর সম্ভাবনা কম। রোববারের মধ্যে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হতে পারে। তবে যাই হোক রোববার সিদ্ধান্ত জানা যাবে।

জানা গেছে, কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে গত ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে আটদিনের কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়। বিধিনিষেধের মধ্যে পালনের জন্য ১৩টি নির্দেশনা দেয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। পরে চার দফা বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ানো হয়, নির্দেশনাতেও আসে সংশোধনী। বিধিনিষেধের সর্বশেষ মেয়াদ শেষ হবে আগামী রোববার মধ্যরাতে।