দেশবরেণ্য পরমাণু বিজ্ঞানী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া।। ফাইল ছবি
আজ দেশবরেণ্য পরমাণু বিজ্ঞানী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী। দিবসটি প্রতিবছর পালনে পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের সকল সহযোগী সংগঠন, মহাজোটের শরিক দল এবং ড. এম এ ওয়াজেদ ফাউন্ডেশন বিজ্ঞানীর কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি, ফাতেহাপাঠ ও জিয়ারত, স্মৃতিচারণ, মিলাদ মাহফিল ও গরিবদের মাঝে খাবার বিতরণসহ পালন করে থাকে নানাবিধ কর্মসূচি।
প্রয়াত বিজ্ঞানীর ভাতিজা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌরমেয়র তাজিমুল ইসলাম শামীম জানান, \”ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রোববার সকালে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন, মহাজোট নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন সামাজিক, পেশাজীবী সংগঠন ও সুশীল সমাজের নেতাগণ লালদীঘির ফতেহপুরে জয়সদনে প্রয়াত বিজ্ঞানীর কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে দিবসের কর্মসূচির আরম্ভ হবে। বিকেলে জয়সদন প্রাঙ্গণে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও ওয়াজেদ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আলোচনা সভা, দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় প্রয়াত বিজ্ঞানীর কর্মময় জীবনের স্মৃতিচারণে আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে।\”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রানী রায় জানান, \”প্রয়াত পরমাণুবিজ্ঞানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, বাদ আসর গোপীনাথপুর হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানায় আলোচনা, মিলাদ, দোয়া ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছে।\”
এছাড়া বেলা ৩টায় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সাথে জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রানী রায়, প্রয়াত বিজ্ঞানীর ভাতিজা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছায়াদত হোসেন বকুল, পৌরমেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র তাজিমুল ইসলাম শামীম সংযুক্ত থাকবেন।
ওয়াজেদ মিয়া ১৯৪২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রংপুরের পীরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। ‘সুধা মিয়া’ হিসেবে পরিচিত অসাধারণ মেধার অধিকারী এ বরেণ্য ব্যক্তি শৈশব থেকেই শিক্ষানুরাগী ছিলেন। এ কর্মবীর বিজ্ঞানী ২০০৯ সালের ৯ মে পরলোকগমন করেন।
তিনি ছিলেন দেশে আণবিক গবেষণার পথিকৃৎ। তিনি পরমাণু গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গেছেন। ওয়াজেদ মিয়া বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পদে দক্ষতা ও সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
তার গবেষণাকর্মের পরিধি ছিল বিস্তৃত। তিনি ফান্ডামেন্টাল ইন্টারেকশন অ্যান্ড পার্টিক্যাল ফিজিক্স, নিউক্লিয়ার অ্যান্ড রেক্টর ফিজিক্স, সলিড স্টেট ফিজিক্স, ইলেকট্রোম্যাগনেটিজম, হেল্থ অ্যান্ড রেডিয়েশন ফিজিক্স, রিনিউবল এনার্জি ইত্যাদি ক্ষেত্রে গবেষণা করেন।
ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া বাংলাদেশ আণবিক শক্তি বিজ্ঞানী সংঘের দুইবার সাধারণ সম্পাদক ও পাঁচবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ পদার্থবিজ্ঞানী সমিতি, বাংলাদেশ বিজ্ঞান উন্নয়ন সমিতি, বাংলাদেশ বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানজীবী সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৯৭ সালে তারই পরামর্শ ও পৃষ্ঠপোষকতায় জাতীয় সমন্বিত উন্নয়ন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়।
ড. ওয়াজেদ বিজ্ঞান গবেষণার পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতিতে নীরবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে গেছেন। ষাটের দশকে তিনি ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত হন। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি গ্রেফতার হন এবং কিছুদিন জেল খাটেন।
১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার সাথে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে তিনি বঙ্গবন্ধু পরিবারের পাশে থেকে তাদের সাহস ও শক্তি জুগিয়েছেন।
ওয়াজেদ মিয়া ঢাকার রংপুর জেলা সমিতির আজীবন সদস্য এবং ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত দুই বছরের জন্য এই সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা এবং ঢাকাস্থ বৃহত্তম রংপুর কল্যাণ সমিতি, উত্তরবঙ্গ জনকল্যাণ সমিতি, রাজশাহী বিভাগীয় উন্নয়ন ফোরাম, বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদ এবং রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার মির্জাপুর বছির উদ্দিন মহাবিদ্যালয়ের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন।
মৃত্যুর পর তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেপুর গ্রামে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
সংবাদ সূত্রঃ বাসস