পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন জানিয়েছেন যে, পরিযায়ী জলচর পাখির পরিযায়ন পথ বিষয়ক গবেষণার উদ্দেশ্যে পাখি শুমারি, পাখির গায়ে রিং পরানো এবং জিপিএস স্যাটেলাইট ট্যাগিং করায় পরিযায়ী পাখির পরিযায়ন সম্পর্কিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে।
বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস উপলক্ষে শনিবার (৮ মে) ‘সিঙ ফ্লাই, সোয়ার-লাইক বার্ড! (পাখির মত গান গাই, উড়ে যাই সুউচ্চ দিগন্তে!) প্রতিপাদ্যে বন অধিদপ্তর আয়োজিত অনলাইন আলোচনা সভায় সরকারি বাসভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি সংযুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেছেন, প্রতিবছর শীত মৌসুমে সুদূর সাইবেরিয়া এবং ইউরোপ থেকে বাঁচার তাগিদে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি এসে আমাদের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করছে। এসব পরিযায়ী পাখি সংরক্ষণে সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে পাখি নিধন কমেছে।
বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী হাবিবুন নাহার, সচিব জিয়াউল হাসান, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক এবং বাংলাদেশ বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন ফেডারেশনের সভাপতি ড. এস এম ইকবাল প্রমুখ।
পাখি সংরক্ষণে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের উল্লেখ করে পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আবাসিক ও পরিযায়ী পাখিসহ প্রায় ৭১০ প্রজাতির পাখির মধ্যে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিলে ৬৫০ প্রজাতির পাখি রক্ষিত প্রাণী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পরিযায়ী পাখি শিকার/হত্যার জন্য সর্বোচ্চ ১ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। পরিযায়ী পাখি সংরক্ষণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সোনাদিয়া, নিঝুম দ্বীপ, টাংগুয়ার হাওর, হাকালুকি হাওর, হাইল হাওর এবং গাঙগুইরার চর ইস্ট এশিয়ান অস্ট্রেলেশিয়ান ফ্লাইওয়ে সাইট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
বনমন্ত্রী বলেন, দেশব্যাপী অবৈধভাবে পাখি শিকার ও বাণিজ্য বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অপরাধীকে হাতেনাতে ধরা ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড করা হচ্ছে। এর ফলশ্রুতিতে বর্তমানে এ সংক্রান্ত অপরাধ বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। পরিযায়ী পাখি সংরক্ষণে স্থানীয় জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন পথসভা, র্যালি, আলোচনা সভা ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হচ্ছে। পাখি সহ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সরকার পুরস্কার প্রণোদনা প্রদান করে থাকে।
তিনি বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার শামুকখোল পাখির কলোনীর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া পরিবারের মাঝে ৩ লাখ ১৮ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।
বনমন্ত্রী বলেন, ‘মহাবিপন্ন’ প্রাণী শকুনের জন্য মরণঘাতী ওষুধ ডাইক্লোফেনাক উৎপাদন ও বিক্রি সারাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং সুন্দরবন ও সিলেটে দুটি ভালচার সেভ জোন ঘোষণা করা হয়েছে। অসুস্থ ও আহত শকুনদের উদ্ধার ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দিনাজপুরের সিংড়ায় একটি শকুন উদ্ধার ও পরির্চযা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভায় শকুন রক্ষায় ক্ষতিকর ‘কিটোপ্রোফেন’ ওষুধের উৎপাদন বন্ধের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, জনগণের সহযোগিতা নিয়ে বর্তমান সরকার পাখিসহ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সফল হবে।
প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বন অধিদপ্তরের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে এবং ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অভ নেচারের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার এ বি এম সারোয়ার আলম প্রমুখ।
আলোচকরা পাখি শিকার বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টির আহ্বান জানান।
মন্ত্রী এসময় প্রতিবেশ রক্ষায় অনন্য ভূমিকা পালন করা পাখিদের আবাসস্থল রক্ষায় দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, পাখি নিধন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে সকলের সহযোগিতা চাই।