ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল ফিতর। ফিরতে হবে বাড়ি। বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে আছেন বাড়িতে। এদিকে প্রিয়জনের টানে কংক্রিটের নগরীতে শ্বাস আটকে আসা জীবন থেকে কিছুটা মুক্তি পেয়ে ঈদকে সামনে রেখে বাড়ির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ছেন দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার যাত্রীরা।
হঠাৎ করেই ফেরি বন্ধের ঘোষণার খবর না পেয়ে হাজার হাজার যাত্রী শনিবার (৮ মে) ভোরে এসে ভিড় জমায় শিমুলিয়া ঘাটের পদ্মার পাড়ে। অথচ ফেরি ছাড়ছে না। রোদের তাপ বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে অস্থিরতা। একইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে সাধারণ যাত্রী, অ্যাম্বুলেন্স ও ছোট গাড়ির সংখ্যাও। ঠিক একই চিত্র শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটেও।
প্রয়োজনীয় কাজে ঢাকাগামী যাত্রীর সংখ্যাও এই ঘাটে হাজার হাজার। একইসঙ্গে ভোর থেকেই ঘাট এলাকায় দেখা যায়, বেশ কিছু রোগীসহ অ্যাম্বুলেন্স, কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি, রয়েছে পণ্যবাহী ট্রাকও। ভোর থেকে ফেরি ছাড়ার অপেক্ষায় ঘাটের পন্টুনে অপেক্ষা করে হাজার হাজার যাত্রী। ফেরিঘাটের রাস্তায় বাড়তে থাকে গাড়ির দীর্ঘ সারি। ফেরি ছাড়বে কি-না তখনও জানা নেই কারো। যাত্রীচাপে সকাল ৯টার দিকে একটি রোরো ফেরি সহস্রাধিক যাত্রী নিয়ে বাংলাবাজার ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। দুপুর ১টার দিকে ফেরিটি শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে এসে নোঙর করে। এছাড়াও বাংলাবাজার ঘাট থেকে অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি কিছু গাড়ি পার করার জন্য একটি ফেরি পন্টুনে প্রস্তুত করলে প্রায় এক হাজার যাত্রী ফেরিটিতে উঠে যায়। পরে ঘাট কর্তৃপক্ষ কিছু যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স পার হবার ব্যবস্থা করে দেয়। কুমিল্লা নামের মিডিয়াম ফেরিটি দুপুরের দিকে শিমুলিয়ার উদ্দেশে বাংলাবাজার ঘাট ছেড়ে যায় বলে ঘাট সূত্রে জানা গেছে।
বাংলাবাজার ঘাট সূত্রে জানা গেছে, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পদ্মা পার হয়ে আসা দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়ছেন শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে এসে। বাস বন্ধ, কয়েকটি মাইক্রোবাস রয়েছে। এছাড়া থ্রি-হুইলার (মাহিন্দ্রা ও ইজিবাইক) ও মোটরসাইকেল রয়েছে ঘাটে। পরিবার-পরিজন নিয়ে আসা যাত্রীরা ঘাট এলাকায় এসে গাড়ি না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন। মাইক্রোবাসে বরিশালের জন্য নিচ্ছে এক হাজার করে টাকা আর মোটরসাইকেলে নিচ্ছে দেড়হাজার টাকা। এছাড়াও দূরপাল্লায় থ্রি-হুইলার সাধারণত যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে ঘাটে গাড়ির তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে।
ফুলঝুড়ি বেগম নামে খুলনার এক যাত্রী বলেন, শিমুলিয়া ঘাটে ভোরে এসেছি। আর দুপুরে এসে পৌঁছালাম বাংলাবাজার ঘাটে। ফেরি ছাড়বে না, ছাড়বে না করে একটা ফেরি ছাড়লো। হাজার হাজার যাত্রী নিয়ে। এখন এই পাড়ে এসে তো বাড়ি যাওয়ার গাড়ি পাচ্ছি না। বাস তো বন্ধই। মাইক্রোবাসও নেই। অনেক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি। কীভাবে বাড়ি যাবো? জানি না! রোজা রেখে এতো কষ্ট সহ্য হচ্ছে না।
ইদ্রিস ফকির নামে গোপালগঞ্জের এক যাত্রী বলেন, ঘাটে কোনো গাড়ি নেই। তিন চাক্কার গাড়িতে এতো দূরে যাওয়াও ঝুঁকি। তারপরও মাহিন্দ্রা ঠিক করেছি তিনগুণ ভাড়া বেশি দিয়ে।
মো. ইব্রাহিম আকন নামে ভাঙ্গাগামী যাত্রী বলেন, ঈদের আগে বাড়ি যেতে হয়। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা আছেন। আজকে পদ্মা পার হতে যে দুর্ভোগ হয়েছে, তা এই জীবনে আর হয়নি। সরকারি সিদ্ধান্তের কোনো কিছুই বুঝি না। ফেরি চলবে না তা একদিন আগেই জানিয়ে দিতো। আবার বন্ধ ঘোষণার পরও তো ফেরি চলেছে। এদিকে মার্কেট খোলা। ঢাকায় গাড়ি চলছে। অথচ দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ! ঘাটে নেমে ১০০ টাকার ভাড়া ৫০০ টাকা দিয়ে যেতে হচ্ছে। তাছাড়া আরও দূরের যাত্রীরা তো গাড়িই পাচ্ছেন না।
বাংলাবাজার ফেরিঘাট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাবাজার ঘাট থেকে কুমিল্লা নামে একটি ফেরি গাড়ি ও যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গেছে শিমুলিয়ার উদ্দেশে। এর পরেই শাহ পরান নামে একটি রোরো ফেরি যাত্রী নিয়ে বাংলাবাজার ঘাট ছেড়ে যায়।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) বাংলাবাজার ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি সেবার যানবাহন পার করার জন্য ফেরি খুলে দিলে যাত্রীরা গিয়ে উঠে পড়েন। ঘাট এলাকায় অসংখ্য যাত্রী রয়েছেন। তাদের ঠেকানো যাচ্ছে না।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ফেরি চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ক্রিটিক্যাল রোগীদের পার হবার জন্য অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে সকালে একটি ফেরিতে উঠানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু যাত্রীদের চাপে ব্যর্থ হলে ফেরিটি বন্ধ রাখা হয়। পরে চেষ্টা করে ঘাটে আটকে থাকা অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে পার করা হয়েছে। তবে এর পরেই যাত্রীদের চাপ বেশি থাকায় একটি রোরো ফেরি যাত্রীদের নিয়ে বাংলাবাজার ঘাট ছেড়ে গেছে বলে আমি জানতে পেরেছি। তবে এ বিষয়ে ফেরি কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তারা হয় তো বিআইডব্লিউটিসি’র ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফেরিটি ছেড়েছেন।