দেশের সরকারি কোম্পানিগুলোকে নিজস্ব আয়ে চলতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন (১ম পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডকে (বিটিসিএল) ৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিটিসিএল কেন নিজেদের আয়ে ব্যয় করতে পারে না।

বিটিসিএল কেন লাভজনক প্রতিষ্ঠান হতে পারে না?

শুধু বিটিসিএল নয়, সব সরকারি কোম্পানিকে নিজেদের আয়ে চলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

আজ মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সভা শেষে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বিটিসিএল একটি সরকারি কোম্পানি, ব্যাংক, বিমা ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সরকারি কোম্পানি, এদের নিজেদের আয়ে চলতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এরা যেন সরকারি অনুদান ও ঋণ নির্ভরতা থেকে বের হয়ে আসতে পারে। সরকার এদের আর কতকাল ঋণ বা অনুদান দিয়ে যাবে? কোম্পানিগুলোকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। নিজেদের আয় দিয়ে এদের ব্যয় করতে হবে।

কীভাবে সরকারি কোম্পানিগুলো নিজেরা নিজেদের আয় দিয়ে চলবে, এমন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, কোম্পানিগুলোকে সব কিছু দেওয়া হয়েছে। ব্যবসার পলিসি তারা ভালো জানে, ব্যবসার পলিসি খাটিয়ে কোম্পানিগুলো আয় করে নিজেরা চলবে। কোম্পানিগুলোকে দীর্ঘদিন ধরে সরকার দিয়ে যাবে, এটা হতে পারে না।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বিটিসিএল কোম্পানি, ব্যাংক কোম্পানি, বিমান, ইনসুরেন্স—এদের নামই তো কোম্পানি। তারা যেন নিজেদের আয় দিয়ে ব্যয় করতে পারে, কতদিন সরকার এখানে টাকা দিয়ে চালাবে? এটা ইকোনোমিক্যালি গ্রহণযোগ্য নয়, এটা প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কারভাবে বলেছেন।

এম এ মান্নান আরও বলেন, এদের (সরকারি কোম্পানি) মুখ থেকে ফিডার খুলে না নিলে এরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে না। আমি চাই এদের সরকারি ঋণ বা অনুদান দেওয়া বন্ধ হোক। এভাবে বছরের পর বছর চলতে পারে না। কোম্পানিগুলোকে দ্রুত সময়ে নিজেদের পায়ে দাঁড়ানো উচিত।

একনেক সভায় ১ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধীনে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে মানুষকে সেবা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটা দীর্ঘদিন ঝুঁলে আছে তাড়াতাড়ি শেষ করেন আর কতদিন সময় নেবেন?

একনেক সভায় ১ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলা পর্যায়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। এ প্রকল্প প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সবার জন্য শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম উন্মুক্ত থাকতে হবে। কোনো ক্লাবের আওতায় থাকবে না, কোনো ব্যক্তির আওতায় থাকবে না। হয়তো ইউএনও দেখভাল করতে পারবেন। স্টেডিয়ামগুলোতে শুধু ছেলে নয়, মেয়েরাও যেন খেলাধুলা করতে পারে সেই ব্যবস্থা রাখতে হবে।

সভায় ‘চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এ প্রকল্প প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাল খনন নিয়ে সাবধান। উপর দিয়ে লোক দেখানো খনন নয়, এটা গভীরভাবে খনন করতে হবে, যাতে করে শুষ্ক মৌসুমে কৃষকেরা এই পানি সেচ কাজে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারেন।

কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিমন্ত্রীরা সভায় অংশ নেন।

এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Scroll to Top