আজ শনিবার ১৭ এপ্রিল। ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। এ দিবসটি একটি স্বাধীন ভূখণ্ড হিসাবে বাংলাদেশ-এর অভ্যূদয়ের সাথে বিশেষভাবে সম্পৃক্ত। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণার পর মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায়, বর্তমান মুজিবনগরে ১৭ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার শপথ নেয়। এই সরকারের সদস্যদের গার্ড অব অনার দেয়া আনসারদের কাছে এখনও জ্বলজ্বলে স্মৃতিময় দিনটি। তবে নতুন করে যাচাই-বাছাই করার খবরে বিব্রত তারা। এ ইতিহাস বিশ্বব্যাপী আরও ছড়িয়ে দেয়ার দাবি দর্শনার্থীদের।
মেহেরপুরের মুজিবনগরের ৮০ একরের বিশাল আয়তনের ক্যানভাসে তুলে ধরা হয়েছে ইতিহাসের অনেক নিদর্শন।
দেশের প্রথম সরকারের শপথ অনুষ্ঠান এখানেই হয়। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণার পর মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায়, বর্তমানে মুজিবনগরে ১৭ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার শপথ নেয়। এই সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। সেদিন সম্মাননা জানানোর দলে ছিলেন মোট ১২ জন। অনবদ্য সাক্ষী হিসেবে বেঁচে আছেন কেবল সিরাজউদ্দিন, আজিম উদ্দিন শেখ, হামিদুল হক নামের এ কিংবদন্তি।
জীবিত তিনজন সময় পেলেই চলে আসেন স্মৃতির মিনারে। এত আনুষ্ঠানিকতা ও অবদানের পরেও কর্তৃপক্ষের এক নতুন পদক্ষেপে আক্ষেপ জন্ম নিয়েছে তাদের মনে।
সিরাজউদ্দিন একজন মুজিবনগর সরকারকে গার্ড অব অনার প্রদানকারী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমাদের কিছু জমি দিলেন। কিন্তু ওই জমি ১২ জনকে দিলেন যার মধ্যে ৬ জন পেয়েছে আর ৬ জন পাননি।
মুজিবনগর সরকারকে গার্ড অব অনার প্রদানকারী আজিম উদ্দিন শেখ বলেন, আমরা যে গার্ড অব অনার প্রদান করেছি তার স্বীকৃতি সরকারই আমাদের দিয়েছে। সরকার স্বীকৃতি দেয়ার পরেও যাচাই-বাছাই কেন করা হচ্ছে।
অপর গার্ড অব অনার প্রদানকারী হামিদুল হক জানান, এখন যদি তাদের বাদ দেয়া হয় তাহলে দেশবাসী কি বলবে। সাংবাদিকরাই বা কি বলবে। বলবে যে চাচারা ভুয়া।
প্রায় সারাবছরই দর্শনার্থীরা আসেন মুজিবনগরে। তারা মনে করেন, শুধু জাতীয় গণ্ডি নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও এই ইতিহাসকে আরও ছড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন। সম্প্রসারিত প্রকল্প হাতে নেয়ার কথা জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন সরকার বলেন, টিপিপি প্রণয়নের কাজ চলছে। এখানে পর্যটকরা এসে মহান মুক্তিযুদ্ধের যে তথ্যগুলো আছে তা খুব সহজেই পাবেন।
তাদের পরিবারের সদস্যরাও ইতিহাসের অংশীদারিত্বের সন্তুষ্টির গণ্ডিতেই আটকে রেখেছেন নিজেদের।
দিনগুলো হারিয়ে গেলেও হারায়নি স্মৃতি, ছবিগুলো বুকে আঁকড়ে ধরে এখন যে তৃপ্তি, সেদিন তা এসেছিল দেশের প্রথম সরকারকে সম্মাননা জানিয়ে ও দেশমাতৃকার জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে।